তৃণমূলও অভিযুক্ত কর্মী প্রিয়াঙ্কা শী-র বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেনি পুলিস। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে চিকিৎসক মহলে।
চিকিৎসক হেনস্থার ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি জানতে চেয়ে পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছেন হাসপাতাল সুপার। অবশ্য অভিযুক্ত তৃণমূলের মহিলা কর্মীর বিরুদ্ধে আপাতত কোনও জোরাল পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলেই ইঙ্গিত দিল পুলিশ।
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ ঘোড়ইকে হেনস্থার ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও জোরাল পদক্ষেপ করা হয়নি। এমনকি, তৃণমূলও অভিযুক্ত কর্মী প্রিয়াঙ্কা শী-র বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেনি। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে চিকিৎসক মহলে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারই হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় জেলার পুলিশ সুপারের কাছে ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চেয়ে এবং উপযুক্ত পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
কিন্তু আদৌ কি কড়া পদক্ষেপ হবে? পুলিশের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, আপাতত প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এ দিন খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “এই অভিযোগে যে ধারায় মামলা রুজু হয়েছে তাতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তাছাড়া অভিযুক্ত ওই মহিলা নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। তাই আমরা ঘটনার সবিস্তার রিপোর্ট আদালতে জানাব। আদালত যা করার করবে।”
নিগৃহীত চিকিৎসক অনিরুদ্ধ অবশ্য এখনও পুলিশের উপরে আস্থা রাখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও তৃণমূল জানিয়েছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। পুলিশের উপর আস্থা রাখছি।” অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। কারণ, ওই হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে চিকিৎসকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। কখনও কর্তৃপক্ষের কাছে বদলির আবেদন জানিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন চিকিৎসক। আবার কখনও আতঙ্কিত হয়ে লম্বা ছুটি নিয়েছেন আক্রান্ত চিকিৎসক। মাস কয়েক আগেই আক্রান্ত হওয়া মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অশোক পাল বলেন, “আমাদের বিভাগে চিকিৎসক কম থাকায় সবসময় চাপে কাজ করতে হয়। তার উপরে অনিরুদ্ধবাবু হাসপাতালে না আসায় চাপ আরও বাড়ছে। হাসপাতালে আমাদের যেভাবে আক্রান্ত হতে হচ্ছে তাতে চিকিৎসা করতে ভয় হয়। তাই যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হওয়া উচিত।” হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ মাহাতো বলেন, “এমন ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। স্বাভাবিকভাবে অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন সাহস না দেখাতে পারে।’’
নিগ্রহের পরই ইস্তফা দিয়েছিলেন অনিরুদ্ধ। কর্তৃপক্ষ অবশ্য সেই ইস্তফা গ্রহণ করেনি। তবে ইস্তফা প্রত্যাহারও করেননি অনিরুদ্ধবাবু। তিনি এখন খড়্গপুরের বাইরে কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছেন।
অনিরুদ্ধ বলেন, ‘‘সত্যি বলতে মনটা ভাল করতে খড়্গপুরের বাইরে ঘুরতে এসেছি। এখনও ইস্তফা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভাবিনি। কারণ অভিযুক্ত ওই মহিলার তো কোনও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি।’’ হাসপাতালের অচলাবস্থা কাটেনি। চারদিনের বদলে দু’দিন মেডিসিনের বহির্বিভাগ খোলা হচ্ছে। অন্তর্বিভাগেও রোগী ভর্তি হতে ভয় পাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আগামী সোমবার ঘাটাল থেকে হারাধন মণ্ডল নামে এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে পাঠানো হচ্ছে।
হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু বলেন, “অনিরুদ্ধবাবু আগেই ছুটি নিয়েছিলেন। উনি ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাইরে থাকবেন। আমরা তাই আগেই চিকিৎসক চেয়ে আবেদন করেছিলাম। সেই মতো ঘাটাল থেকে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিযুক্ত করা হচ্ছে।”