প্রতীকী ছবি।
বছর তিনেক আগে বিরোধী দলের কাউন্সিলর ভাঙিয়ে পুরবোর্ড দখলে মাফিয়া-তৃণমূল-পুলিশ আঁতাতের অভিযোগ উঠেছিল খড়্গপুরে। তখন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। চাপের মুখে একে-একে ১৫জন বিরোধী কাউন্সিলর গিয়েছিলেন তৃণমূলে।
এখন সময় বদলেছে। ভারতী আর পুলিশের চাকরিতেই নেই। জেলা পুলিশ সুপারের পদ থেকে বদলির পরে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। আর বছর খানেক আগে রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডু খুনে জেলবন্দি হয়েছে আর এক রেলমাফিয়া বাসব রামবাবুকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন শাসকদলের অনেক কাউন্সিলর দলবদলের ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন বলে দাবি করছে বিজেপি। এমন সময় ২৬জন কাউন্সিলরকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার জরুরি বৈঠকে বসল তৃণমূল।
শনিবার খড়্গপুর শহরের ঝাপেটাপুরে ওই বৈঠকে তৃণমূলের প্রতীকে জেতা ১১জন কাউন্সিলর এবং দল বদলে তৃণমূলে আসা ১৫জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। তৃণমূল নেতৃত্ব মুখে বলছেন, সাংগঠনিক কারণে এই বৈঠক। তবে জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতী-জমানার শেষে খড়্গপুরে দলের ২৬জন কাউন্সিলরকে একত্রিত করে বৈঠকে বসার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।
ভারতী জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন ২০১৫ সালে বিরোধী কাউন্সিলর ভাঙিয়ে খড়্গপুর পুরবোর্ড দখলের অভিযোগ উঠেছিল। ৩৫ আসনের পুরসভার ১১টিতে জিতেও ১৮জন কাউন্সিলরকে নিয়ে বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। দুষ্কৃতী তাণ্ডব থেকে বাঁচতে প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে-সহ ১১জন কংগ্রেস কাউন্সিলর ভিন্ রাজ্যে আত্মগোপন পর্যন্ত করেছিলেন। বোর্ড গঠনের পরে রবিশঙ্কর-সহ ৫জন কাউন্সিলর তৃণমূলে গিয়েছেন। রবিশঙ্করই এখন তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি।
ভারতী-জমানার শেষে ‘দলবদলু’ কাউন্সিলররা দলে ফিরতে চাইছে বলে দাবি করছে বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে এ দিনের বৈঠকে দলের ২৬জন কাউন্সিলর যাতে উপস্থিত থাকেন সে জন্য জোর দেওয়া হয়েছিল বলে তৃণমূলের দলীয় সূত্রে খবর। সেই মতো এ দিন খড়্গপুরে বইমেলার অনুষ্ঠান থাকলেও ২৬জন কাউন্সিলরের সকলেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মূলত বিজেপিকে রোখার বার্তা দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। পাশাপাশি তৃণমূলের জেলা সভাপতি জানান, উন্নয়নে জোর দিয়ে শহর ঢেলে সাজার কথা বলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে উঠে আসে ভারতী-প্রসঙ্গও। প্রাক্তন জেলা পুলিশ সুপারের লোক নন দাবি করতে শোনা যায় এক কাউন্সিলরকে। আবার পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “আমি বরাবর দলের মূলস্রোতে রয়েছি। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে দল করি।’’
খড়্গপুর শহরের বিধায়ক বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। প্রাক্তন পুলিশ সুপারের পদ থেকে ভারতী ঘোষ ইস্তফা দেওয়ার পরে শহরে ‘দলবদলু’ কাউন্সিলরদের ভয় কেটেছে বলে মনে করেন দিলীপবাবুও। তাই বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূল তৎপর হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শীঘ্রই শহরে তৃণমূল যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী সভা করবেন বলেও জানানো হয়েছে। তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে এ দিন বলেন, “এই প্রথম ২৬জন কাউন্সিলরকে একসঙ্গে নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক হল। খুব তাড়াতাড়ি শহরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর সভা হবে। আর বিজেপিকে রুখে দেওয়া তো আমাদের মূল লক্ষ্য।’’
প্রতিটি ওয়ার্ডের উন্নয়নে কাউন্সিলরদের আরও জোর দেওয়ার কথা বৈঠকে বলা হয়েছে। সেই উন্নয়নে রাজ্য সরকার যে টাকার অভাব রাখবে না, দেওয়া হয়েছে সেই বার্তাও। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিতবাবু বলেন, “বিজেপি তো অনেক বড়-বড় কথা বলে অপপ্রচার করছে। কিন্তু আমাদের ২৬জন কাউন্সিলর বৈঠকে উপস্থিত থেকে বলে দিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূল ছেড়ে কোথাও যাচ্ছেন না। আমরা উন্নয়নের জন্য এই বৈঠক করেছি। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন শহরকে ঢেলে সাজতে। তাই কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডের উন্নয়নে নজর দিতে বলা হয়েছে।”