রামনগরের সভায় শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
রামনগরের সভা থেকে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করলেন না শুভেন্দু অধিকারী। উল্টে বললেন, ‘‘আমি এখনও দলের প্রাথমিক সদস্য। রাজ্য মন্ত্রিসভারও সদস্য। দলের নিয়ন্ত্রকরা আমাকে তাড়াননি। আমিও দল ছাড়িনি। মুখ্যমন্ত্রী আমায় মন্ত্রিসভা থেকে তাড়ািয়ে দেননি। আমিও ছাড়িনি। যে ক’টি পদে আছি, সবকটিতেই আমি নির্বাচিত। মন্ত্রিসভায় থেকে দলের বিরুদ্ধে আমি কথা বলব না।’’ রাজ্যের রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল, দলবদল নিয়ে প্রবল জল্পনার মধ্যেই রামনগরে বৃহস্পতিবার তাঁর ঘোষিত ‘মেগা শো’ থেকে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে দেবেন শুভেন্দু। কিন্তু তাঁর ভাষণে তেমনকিছু দিশা তো মেলেইনি। উল্টে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘সমবায়ের মঞ্চ থেকে কোনও রাজনৈতিক কথা বলা যায় না। নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে কাজ করার লোক আমরা নই। এই সভা নিয়ে সংবাদমাধ্যম অনেক হাইপ তুলেছিল। আমি বলেছিলাম মেগা শো হবে। সেটা সমবায়ের শো।’’
পাশাপাশিই শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘দল করতে বিভিন্ন কারণে গেলে বিভেদ আসে। বিভেদ থেকে বিচ্ছেদও আসে। কিন্তু যতক্ষণ মন্ত্রিসভায় আছি বা দলে আছি, ততক্ষণ কোনও রাজনৈতিক কথা বলা যায় না। আমি সেটা বলতে পারি না।’’ সে কথা বলার আগেই শুভেন্দু বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর নির্বাচিত হওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘ওটা পেশার মতো করিনি। নেশার মতো করেছি।’’
প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর দলত্যাগের জল্পনা তীব্রতর হওয়ার পর তাঁর মন বোঝার জন্য এই তরুণ নেতার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কয়েকদিন আগেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় সেই আলোচনা শুরু করেছেন। প্রথম দফায় সেই আলোচনা অসমাপ্ত রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই আবার তাঁদের আলোচনায় বসার কথা। বৃহস্পতিবার সৌগত জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে তিনি আবার শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
বস্তুত, রামনগরের সভায় শুভেন্দুর বক্তব্য শুনে তৃণমূলের অনেকে মনে করছেন, আলোচনা প্রক্রিয়া এখনও জারি থাকার কারণেই তিনি ওই সভা থেকে সুর চড়ালেন না। কিন্তু একইসঙ্গে বলে দিলেন, ‘যতক্ষণ’ মন্ত্রিসভায় এবং দলে আছেন, ‘ততক্ষণ’ তিনি দল বা সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলবেন না। এমনকি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে অধিকারী পরিবারের ঘোষিত বিরোধী অখিল গিরি সম্পর্কে কোনও আক্রমণাত্মক কথাও বলেননি শুভেন্দু। বরং বলেছেন, তাঁকে দল তাড়ায়নি। মুখ্যমন্ত্রীও তাড়াননি। তিনিও দল ছাড়েননি। তৃণমূলের একটি অংশ অবশ্য মনে করছে, ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুভেন্দু তাঁর দলবদলের যাবতীয় জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন। আগামী বিধানসভা ভোটে তিনি তৃণমূলের হয়েই লড়বেন। যদিও পোড়খাওয়া রাজনীতিকরা বলছেন, ওই বিষয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। দলের কাছে শুভেন্দু শর্ত বা শর্তাবলি রাখতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে তেমনকিছু হলে তা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেনে নেবেন কি না, তা-ও দেখার। যদিও অখিল সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘শুভেন্দু দলে থাকলেন কি গেলেন, তা নিয়ে দলের কিছু যাবে-আসবে না।’’
আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশ মেনে ছটপুজোর আবেদন মমতার, শুভেচ্ছাবার্তাও
প্রসঙ্গত, প্রথমে শুভেন্দুর ওই সভা হওয়ার কথা ছিল বেলা ১১টায়। বুধবার রাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই সভা হবে দুপুর ২টোয়। সভায় শুভেন্দু বক্তৃতা করতে শুরু করেন বেলা ৩টের পর। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘সমবায়মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক কথা বলা যায় না। তাই এখানে রাজনীতির কথা বলব না। আমি বিদ্যাসাগরের মাটির লোক। অনৈতিক কিছু করব না কোনওদিন।’’ প্রায় ২০ হাজার সমবায়কর্মীকে নিয়ে ওই সভার আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে শুভেন্দু পাশাপাশিই বলেন, ‘‘আমি বসন্তের কোকিল নই। একদিন-দু’দিনের লোক নই। সকলের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ আছে। কোভিডে থাকি। লকডাউনের মধ্যে মানুষের পাশে ছিলাম। আমপানও থাকি। প্রত্যেকটা মানুষের সঙ্গে আছি। তাই বলছি, ঘরে নয়, আমি মাঠে থাকি।’’
আরও পড়ুন:মেট্রোয় মহিলা-শিশুদেরও এ বার লাগবে না ই-পাস
সভায় খুব বেশিক্ষণ বক্তৃতা করেননি শুভেন্দু। সবমিলিয়ে মিনিটকুড়ি। বক্তৃতায় তিনি ঘোষণা করেন, নন্দকুমার থেকে পুরুলিয়া একাধিক জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন করবেন। তাছাড়াও লাগাতার একের পর এক কর্মসূচি নেওয়া হবে। সভার শেষে চেনাগলায় শুভেন্দু জনতাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘ভবিষ্যতে আপনাদের আশীর্বাদ পাবো তো?’’ সমর্থকরা সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ বলেন। গতকাল সুখেন্দুশেখর রায় বলেছিলেন, শুভেন্দু এখনও তৃণমূলের সদস্য। কিছুটা সেই সুরেই শুভেন্দু জানিয়ে দিলেন, তিনি এখনও জোড়াফুলের শিবিরেই আছেন।