অভিজিৎ মাহাতো। নিজস্ব চিত্র
টিউশন থেকে বাড়ি ফিরছিল স্কুলছাত্র। সামনে হঠাৎ হাতির দল। সাইকেল ফেলে দে ছুট! তাতেই বাঁচল প্রাণ।
বুধবার সকালে মেদিনীপুর সদর ব্লকের চিলগোড়ার ওই ঘটনা প্রসঙ্গে মেদিনীপুরের এক বনকর্তা বলেন, ‘‘ওই এলাকায় হাতির একটি দল ঢুকে পড়েছে। দলটির গতিবিধির উপরে নজর রাখা হচ্ছে।’’
অভিজিৎ মাহাতো। বাড়ি চাঁদড়ার শিরষিতে। স্থানীয় ঝরিয়া উচ্চপ্রাথমিক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র অভিজিৎ সহপাঠীদের সঙ্গে সাইকেলে করে চিলগোড়ায় টিউশন পড়তে যায়। অন্য দিনের মতো এ দিনও টিউশন পড়ে ফিরছিল তারা। হঠাৎ রাস্তায় হাতির দল দেখে চমকে যায় তারা।
অভিজিতের বাবা শ্যামাপদ মাহাতো বলছিলেন, ‘‘ওরা কয়েকজন একসঙ্গেই টিউশনে যায়, আসে। এদিনও একসঙ্গে ফিরছিল। ও কিছুটা পিছনে ছিল। হঠাৎই হাতির দলটি জঙ্গল ছেড়ে রাস্তায় চলে আসে।’’ চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিজিৎ ও তার বন্ধুরা সাইকেল ফেলে ছুট লাগায়। ঘটনার পরে তার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট অভিজিতের। তার কথায়, ‘‘খুব জোর বেঁচে গিয়েছি। সাইকেল ফেলে পালাতে না- পারলে যে কী হত! ভেবেই শিউরে উঠছি!’’
পালাতে গিয়ে হাতে ও পায়ে সামান্য চোট পেয়েছে অভিজিৎ। পরে হাতির দলটি কিছু দূর চলে যাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাইকেল নিয়ে সে বাড়ি ফেরে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, একটি হাতি সাইকেলটি শুঁড়ে তুলে মাটিতে আছাড়ও মেরেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ছেলেটি চট করে পালাতে পেরেছিল বলে রক্ষা পেয়েছে।’’ শ্যামাপদ বলেন, ‘‘ছেলেকে বলেছি, এ বার থেকে টিউশন থেকে ফেরার সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গেই ফিরতে। একা একা না ফিরতে।’’ মেদিনীপুরের এক বনকর্তা বলেন, ‘‘হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আমরাও নানা ভাবে গ্রামবাসীদের সতর্ক করি। সব সময় সতর্কভাবে চলাফেরা করাই ভাল।’’
হাতির দলের সামনে পড়ে সাধারণ মানুষের আহত ও নিহত হওয়ার সংখ্যা কম নয় পশ্চিম মেদিনীপুরে। এই মেদিনীপুর সদর ব্লকেই এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। কখনও ধেড়ুয়া, চাঁদড়ায়, কখনও কনকাবতী, মণিদহে। ফের হাতির দল এলাকায় চলে আসায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ, ধান ও অন্য আনাজ মাঠে রয়েছে। এমনিতেই এ বার জলের অভাবে চাষ দেরিতে শুরু হয়েছে। কিছু জমিতে চাষ করাই সম্ভব হয়নি।
শিরষির এক বাসিন্দা বলছিলেন, ‘‘মাঠে ধান রয়েছে। হাতির হানায় ফসলের ক্ষতি হতে পারে বলেই আমাদের আশঙ্কা।’’ ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে সে ক্ষেত্রে আবেদনের ভিত্তিতে নিয়মমাফিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে বন দফতর।