মুখে ছিল না মাস্কও । নিজস্ব চিত্র।
করোনাকালে সব স্কুল-কলেজ বন্ধ। জমায়েত এড়িয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস এ বার পালন হয়েছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। অথচ ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া কলেজের ক্লাসঘরের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের অভিযোগ উঠল টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। ঘটনায় সরব হয়েছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি।
কলেজ সূত্রে খবর, দিন দুয়েক আগে অধ্যক্ষার কাছে এ দিনের অনুষ্ঠানের জন্য টিএমসিপি-র প্যাডে চিঠি লিখে অনুমতি নিতে গিয়েছিলেন সংগঠনের কলেজ ইউনিটের সদস্যরা। কিন্তু কলেজের অধ্যক্ষা উমা ভৌমিক অনুমতি দেননি। অভিযোগ, শুক্রবার বিকেলে অধ্যক্ষা কলেজ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরই টিএমসিপি কর্মীরা ক্যাম্পাসে ঢোকে। সব ক্লাসঘরই এখন তালাবন্ধ। তারা একতলায় ১৫ নম্বর ঘরের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে বলে অভিযোগ। ঘরটি অনুষ্ঠানের জন্য সাজানো হয়।
তারপর শনিবার যথারীতি অনুষ্ঠান হয়। বিবেকানন্দের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করেন জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী নিয়তি মাহাতো। তিনি ক্যাম্পাসে দলীয় পতাকাও উত্তোলন করেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের বন ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মামনি মুর্মু, কৃষি সেচ কর্মাধ্যক্ষ তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, টিএমসিপি-র ব্লক সভাপতি পম্পা রানা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়েছে। প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ অনুষ্ঠান শেষ হয়।
দলীয় সূত্রে খবর, টিএমসিপি-র জেলা সহ-সভাপতি শেখ নজরুলের নেতৃত্বেই অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। এ নিয়ে এবিভিপি-র কলেজ ইউনিটের সদস্যরা অধ্যক্ষার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। জেলা এবিভিপির নেতা বাপি দাস বলেন, ‘‘অধ্যক্ষার অনুমতি ছাড়া ক্লাসঘরের তালা ভেঙে কী ভাবে অনুষ্ঠান করল ওরা?’’ এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌতম মাহাতোও বলছেন, ‘‘শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। অথচ টিএমসিপির দাদাগিরি চলছে। এ ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত কলেজ কর্তৃপক্ষের।’’ টিএমসিপি নেতা নজরুল মানছেন, ‘‘গোটা কলেজ সাজানো হয়েছিল। কলেজের মধ্যে পতাকা উত্তোলন ও ক্লাসঘরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।’’ পরে তালা ভাঙার কথা উঠতেই অবশ্য তাঁর দাবি, ‘‘কলেজের মধ্যে কিছু হয়নি। প্যান্ডেল করে আলাদা জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে।’’ তবে নিয়তি স্বীকার করছেন, ‘‘কলেজের ক্লাসরুমের ভিতরে অনুষ্ঠান হয়েছিল। সবাই দূরত্ব বজায় রেখেই বসেছিল।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘কলেজের অনুমতি নিয়েছিল কিনা জানা ছিল না।’’
কলেজের অধ্যক্ষা উমা বলেন, ‘‘কলেজ কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে কলেজের ক্লাসরুমে টিএমসিপি অনুষ্ঠান করল। বাইরে থেকে এত লোকজন এল, অথচ কর্তৃপক্ষ কিছুই জানতে পারলেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি রথীন্দ্রনাথ মাহাতোরও বক্তব্য, ‘‘টিএমসিপি-র ইউনিটের সদস্যরা কলেজের বাইরে অনুষ্ঠান করবে বলে জানিয়েছিল। আমার থেকে দু’হাজার টাকাও নিয়েছিল। তালা ভেঙে অনুষ্ঠান করা একেবারেই উচিত হয়নি।’’