গুলিতে আহত সিরাজ মহম্মদ। নিজস্ব চিত্র
পুজোর আগে হাতে আর দুটো রবিবার। মণ্ডপ তৈরির তোড়জোড় থেকে পুজোর কেনাকাটা, সবই চলছে জোরকদমে। সরগরম সেই রবিবারেই ভরদুপুরে গুলি চলল রেলশহরে। গুলিবিদ্ধ হলেন এক যুবক।
রবিবার তখন দুপুর দেড়টা। খড়্গপুর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভবানীপুরে স্টেট ব্যাঙ্কের পিছনে আচমকাই শোনা যায় গুলির আওয়াজ। তারপর একটি মোটরবাইকে করে তিন জনকে একটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির নাম সিরাজ মহম্মদ। বছর বিয়াল্লিশের এক যুবকের বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে একশো মিটার দূরে দেবলপুর এলাকায়। পেশায় মাছ আড়তের কর্মী সিরাজ এ দিন সাঁকরাইল থেকে ব্যবসার টাকা নিয়ে ফিরছিলেন। তখনই তাঁর পা লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনার পরে স্থানীয় যুবকেরা গুলিবিদ্ধ যুবককে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে রেফার করা হয়।
সিরাজের দাবি, দুষ্কৃতীরা তার যে ব্যাগটি নিয়ে পালিয়েছে তাতে তিন লক্ষ টাকা ছিল। এ দিন তিনি খড়্গপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে অটোয় গোলবাজারের মসলিনচকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। স্টেট ব্যাঙ্ক পেরিয়ে বাড়ির গলিতে ঢুকতেই মোটরবাইকে আসা তিন যুবক তাঁকে আটকে গুলি চালায়। মালিকা বেগম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমি ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে দেখলাম একটি ব্যাগ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ধস্তাধ্বস্তি হচ্ছে। পাশে আরও দুই যুবক মোটরবাইকে অপেক্ষা করছে। তার পরেই গুলির শব্দ শুনলাম এবং ব্যাগটি নিয়ে তিনজনকে মোটরবাইকে করে যেতে দেখলাম।”
ভবানীপুরের এই জায়গাতেই গুলি চলে। নিজস্ব চিত্র
গুলিবিদ্ধ যুবকের দাদা পেশায় অটো চালক হায়াত মহম্মদের দাবি, “আমার ভাই ইজাজ আহমেদ নামে মাছ ব্যবসায়ীর হয়ে ব্যবসার টাকা সংগ্রহের কাজ করত। মনে হচ্ছে আগে থেকে কেউ খোঁজখবর করেই গুলি চালিয়েছে। আমার ভাইয়ের কোনও শত্রু ছিল না।”
গত ১৫ দিনে এই নিয়ে তিনবার গুলি চলার অভিযোগ উঠল রেলশহরে। পুজোর আগে ছুটির দিনে পাড়ার মধ্যে গুলির শব্দে সিঁটিয়ে গিয়েছেন ভবানীপুরের বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা গুড়িয়া বেগম, সবনম বেগমদের ক্ষোভ, ‘‘দুষ্কৃতীরা পাড়ার মধ্যে গুলি চালিয়ে চলে গেল। পুলিশ কী করছে?” ঘটনায় রাজনীতির সুর চড়িয়েছে বিজেপি। দলের জেলা সহ-সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, “উপ-নির্বাচনের আগে তৃণমূল দুষ্কৃতীদের মদত দিচ্ছে। পুলিশও নিষ্ক্রিয়। আমাদের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই কথা বলার পরেও এই ঘটনা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করছে।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির পাল্টা দাবি, “বিজেপি খড়্গপুর বিধানসভায় জিতেও কিছু করতে পারেনি। তাঁরাই দুষ্কৃতীদের মদত দিচ্ছে।” ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখছেন তদন্তকারীরা। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই গুলি চলেছে। পুজোর আগে ‘ক্রাইম এগেনস্ট প্রপার্টি’ বেড়ে যায়।’’