কমছে না আলুর দাম। —ফাইল চিত্র।
ভিন্ রাজ্যে আলুর রফতানি বন্ধে পুলিশ প্রশাসনের ধড়পাকড় অব্যাহত।আড়ালে আবডালে ভিন্ রাজ্যে আলু ‘পাচার’ রুখতে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চালক ধরাও পড়ছে পুলিশের জালে। জেলায় পর্যাপ্ত আলুও মজুত। ব্যবসায়ী, হিমঘর মালিকও ট্রাক মালিকদের সংগঠনকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও করছে প্রশাসন। তার পরেও আলুর দাম কমছে কই? পাইকারি বাজারের সঙ্গে খোলাবাজারের আলুর দামেরই বা এত ফারাক কেন, প্রশ্ন তুলছেন ক্রেতারা।
এই মুহুর্তে গোটা জেলায় মজুত আলুর পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। আর দিন পনেরোর মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসার কথা। এখন ভিন্ রাজ্যে আলুও সে ভাবে যাচ্ছে না। তার পরেও দাম না কমায় এ বার সরব হয়েছে আমজনতা। মাস ছয়েক ধরেই কিলো প্রতি তিরিশ-বত্রিশ টাকায় বিকোচ্ছে জ্যোতি আলু। চন্দ্রমুখী বিকোচ্ছে চল্লিশ টাকায়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর আলুর দাম ঘাটালে এতটুকু কমেনি বলে অভিযোগ। হিমঘর থেকে আলু একুশ থেকে সাড়ে একুশ টাকা কিলো দরে বেরোচ্ছে অথচ খোলা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে আট থেকে দশ টাকা বেশি দরে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বরুণ পণ্ডিত বলেন, “পাইকারি আলুর দর একুশ টাকা প্রতি কিলো। খুচরো আলুর এত বেশি দাম কেন, তা প্রশাসন বলতে পারবে। ভিন্ রাজ্যে আলু যাচ্ছে না। সীমানা এলাকায় পুলিশ ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করছে।”
আলুর দাম আমজনতার নাগালে আনতে তৎপর হয়েছে জেলা পুলিশ- প্রশাসনও। ভিন্ রাজ্যে আলু যাতে না যায়, তার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই হিমঘর-সহ আলুর আড়ত গুলিতে অভিযান-নজরদারি চলছে। ভোটের আগে থেকেই চড়ছিল আলুর দাম। দুর্যোগের কারণে বাড়ছিল আনাজের দামও। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলুর দাম কমাতে দফায় দফায় বৈঠকে বসেছিলেন। জেলায় জেলায় কত পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে, সেই আলু কোথায় যাচ্ছে, কেন কমানো যাচ্ছে না, সমস্যা কোথায় তার সবিস্তার খোঁজখবর নেন তিনি। এর পরই আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো নিয়ে কড়া বার্তা শুনিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ওই বার্তার পরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছিল। আলুর দামও কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।ঘাটাল-সহ মেদিনীপুর জেলা জুড়েই সুফল বাংলার স্টল গুলিতে আলু বিক্রি শুরু হয়। সেখানে অবশ্য ২৫ টাকা কিলো দরেই আলু বিক্রি হচ্ছে।তবে সেই স্টল গুলিতে সবসময় সব ক্রেতা পৌঁছতে পারছে না। পাশাপাশি সেখানে এত আলু মজুতও নেই। ফলে আমজনতার খোলা বাজারই একমাত্র ভরসা। সেখানেই যত বিপত্তি। ঘাটাল শহরের এক বাসিন্দা ফটিক পাল বলছিলেন, “আলুর দাম কমানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী। বাজারে আলুর জোগানও স্বাভাবিক। সঙ্কট কোথায়? তা হলে দাম কেন বাড়ছে।”এই পরিস্থিতিতে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করতে আরও কড়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ প্রশাসন। আলু ব্যবসায়ী, হিমঘর মালিকদের নিয়ে শুক্রবার চন্দ্রকোনায় এক বৈঠক করেন ঘাটালের মহকুমা পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা। একাধিক হিমঘরে অভিযান চালানো হয়। রাস্তায় নাকা তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন আলুর আড়ত গুলিতে যান তাঁরা।