—প্রতীকী চিত্র।
জেলার পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলে ছিল না একচেটিয়া ঘাসফুল শিবিরের দাপট। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের আসনে তৃণমূল শিবিরে এবার যেমন থাবা বসিয়েছে বিজেপি এবং বামেরা, তেমনই জেলার ২৪টি পঞ্চায়েত ছিল ত্রিশঙ্কু অবস্থা। আর সেই সব পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনেই দেখা গিয়েছে রাজনৈতিক চমক। কোথায় বাম-বিজেপি হয়েছে একত্রিত। তো তৃণমূলের সঙ্গে ‘জোট’ গড়েছে বাম এবং কংগ্রেস। জেলায় পঞ্চায়েতের প্রধান, উপ প্রধান নির্বাচনের প্রথম দিন এভাবেই মিলে মিশে গিয়েছে লাল-সবুজ-গেরুয়া!
বুধবার ছিল পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের প্রথম দিন। ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থাকা জেলার আটটি পঞ্চায়েতে এদিন বোর্ডের সভা হয়েছে। ওই সভার উল্লেখযোগ্য চমক দেখা গিয়েছে মহিষাদল ব্লকের অমৃতবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। সেখানে বামেদের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গড়েছে বিজেপি। যদিও জেলা বাম নেতৃত্বের সাফাই, সেখানে জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যেরা দলের নির্দেশ অমান্য করেছে।
ওই পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের মধ্যে আটটি পেয়েছিল তৃণমূল এবং আটটি পেয়েছিল বিজেপি। দু’টি ছিল বামেদের দখলে। বুধবার বোর্ড গঠনের সময় গোপন ব্যালটে দু’পক্ষের মধ্যে ফের একবার ভোটের আয়োজন করা হয়। শপথ গ্রহণের পরে প্রাক্তন বাম প্রধান মধুমিতা দলুই বেরিয়ে যান। অপর বাম সদস্য বুলুপ্রসাদ জানা উপস্থিত ছিলেন সভাকক্ষে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে ফাল্গুনী জানা এবং বিজেপির পক্ষ থেকে শুভ্রা পন্ডা প্রধান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ন’টি ভোট পেয়ে জয়ী হন বিজেপির শুভ্রা। তৃণমূলের অভিযোগ, বাম পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপির শুভ্রাকে ভোট দিয়েছেন। বুলুপ্রসাদ জানাও বলে, ‘‘স্থানীয় নেতৃত্বের নির্দেশ অনুযায়ী বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন করেছি।’’
‘রাম এবং বামে’র জোট নিয়ে সর্বদাই সরব হয়েছে তৃণমূল। এর মধ্যে এ দিনের এই ঘটনা সেই জল্পনায় ইন্ধন দিয়েছে। মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা আগে থেকেই বাম-রামের গোপন জোট রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছি। শেষমেষ এই ক্ষেত্রে সেটা প্রমাণিত হল।’’ যদিও এ ব্যাপারে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলছেন, ‘‘এ রকম হওয়ার কথা নয়। উপর থেকে নির্দেশ রয়েছে তৃণমূল আর বিজেপি বিরোধীকে সমর্থন করতে হবে। কেন এই কাজ হল তা স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে খোঁজ নিচ্ছি।’’
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বল্লুক-১, বল্লুক-২ এবং রঘুনাথপুর-২ পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু অবস্থায় ছিল। রঘুনাথপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান পদ তফসিলি হিসাবে সংরক্ষিত। জয়ীদের মধ্যে তৃণমূলের একজন তফসিলি সদস্য থাকলেও বিজেপির কোনও তফসিলি সদস্য ছিল না। ফলে তৃণমূলের সদস্য মৌসুমী বর্মণ এ দিন প্রধান নির্বাচন হয়েছেন। অন্যদিকে, ‘টস’ করে উপ-প্রধান পদে জয়ী হন বিজেপির লক্ষ্মীরাণি সামন্ত। আবার, বল্লুক-১ পঞ্চায়েতে বিজেপির সমর্থনে প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন নির্দল সদস্য। এখানে মোট ১৭ জন সদস্যের মধ্যে বিজেপির ছ’জন, এসইউসি-র পাঁচ জন, নির্দল চার জন এবং তৃণমূলের দু’জন নির্বাচিত হন।
এদিন বোর্ড গঠনের সভায় নির্দল সদস্য পলি ডিন্ডা প্রামাণিককে বিজেপির ছ’জন সদস্য এবং নির্দল দু’জন সদস্য সমর্থন করেন।তবে এখানের তফসিলি মহিলা সংরক্ষিত উপ-প্রধান পদের নির্বাচন এ দিন হয়নি। অন্যদিকে, বল্লুক-২ পঞ্চায়েতে ‘টস’ করে প্রধান হন তৃণমূলের কাজি রফিক আহমেদ খান। উপ-প্রধান নির্বাচনেও ভোটাভুটি পরে টসে জয়ী হন নির্দল সদস্য নয়ন মণ্ডল। তিনি তৃণমূলের সমর্থন পেয়েছেন।
এ দিন চমক দেখা গিয়েছে কোলাঘাট ব্লকেও। এই ব্লকে পাঁচটি ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতের মধ্যে এদিন তিনটিতে (বৈষ্ণবচক, বৃন্দাবনচক এবং গোপালনগর) বোর্ড গঠন হয়েছে। বৈষ্ণবচকে সিপিএম, নির্দল এবং কংগ্রেসের জয়ী সদস্যেরা বিজেপিকে সমর্থন করে। ফলে তৃণমূল এখানে বোর্ড গড়তে পারেনি। এখানের সিপিএম থেকে প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। বিজেপিতে যোগ দেওয়া এক নির্দল সদস্যকে এখানে উপ-প্রধান করা হয়েছে।গোপালনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী সিপিআই সদস্য আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এদিন ভোটাভুটির সময় আরেক একজন সিপিএম সদস্য তৃণমূলকে সমর্থন জানান। এখানে তৃণমূল সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণ করে বোর্ড গঠন করে। বৃন্দাবনচকে ভোটাভুটিতেও জয়ী একমাত্র সিপিএম সদস্য তৃণমূলকে সমর্থন করেন। ফলে বোর্ড গঠনের অধিকার পায় তৃণমূল।