জবরদখল: পুরসভার জলপ্রকল্পের জমিতে বেআইনি ভাবে মাথা তুলছে বাড়ি। মেদিনীপুরের নান্নুরচকে। নিজস্ব চিত্র
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেদিনীপুর সফরের মুখে বেদখল হয়ে যাওয়া সরকারি জমি ফিরে পেতে তৎপর হয়েছে পুরসভা। আগামী এক মাসের মধ্যে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার পুরসভায় এ নিয়ে শুনানিতে হাজির ছিলেন পুরপ্রধান প্রণব বসু। যাদের বিরুদ্ধে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ ছিল, তাদের ওই শুনানিতে তলব করা হয়েছিল। পুরপ্রধান বলেন, “যারা সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণ করেছে, তাদের ডাকা হয়েছিল। জবরদখল বরদাস্ত করা হবে না। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।’’ এক পুরকর্তার কথায়, “জবরদখলকারীরা নিজেরাই জানিয়েছে, এক মাসের মধ্যে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দেবে।’’
এর আগে এক প্রশাসনিক সভায় জবরদখল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘যে খুশি এসে সরকারি জায়গা দখল করে বসে পড়বে আর সেই জবরদখলের জন্য উন্নয়নের কাজ থেমে যাবে, এমনটা চলবে না।’ ফের বুধবার শহরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে নান্নুরচকে জলপ্রকল্পের বেদখল জমি ফেরত পেতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা।
মেদিনীপুরে সরকারি জমি বেদখলের অভিযোগ নতুন নয়। এ বার পুরসভার জলপ্রকল্পের জমি বেদখল করার অভিযোগ উঠেছে। আনন্দবাজারে এই খবর প্রকাশের পরে শোরগোল বাধে জেলার সদর শহরে। নড়েচড়ে বসেন জেলার প্রশাসনিক কর্তারা। তাঁরা খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। বিড়ম্বনায় পড়ে পুরসভা। সরকারি জমির জবরদখল নিয়ে পুরসভায় অভিযোগও জমা পড়ে। অবশ্য শুরুতে পুরকর্তারা কার্যত উদাসীনই ছিলেন। লিখিত অভিযোগ আসার পরে পুরসভা তৎপর হয়। শুধু পুরসভায় নয়, স্থানীয় মানুষজন মহকুমাশাসক, জেলাশাসকের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “জলপ্রকল্পের জমি বেদখল হচ্ছে। অথচ, পুরসভা হাত গুটিয়ে রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে নামপ্রকাশ করছি না। তবে প্রশাসনের সব মহলেই অভিযোগ জানিয়েছি। পুরসভার জমি পুনরুদ্ধারের আর্জি জানিয়েছি।’’
মেদিনীপুর শহরের নান্নুরচকে রয়েছে এই জলপ্রকল্প। এখান থেকেই মেদিনীপুর শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ হয়। এটি শহরের পুরনো জলপ্রকল্প। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইতিমধ্যে জলপ্রকল্পের জমির ১২-১৫ ফুট জায়গা দখল করে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। পুরসভার এক সূত্রে খবর, অভিযোগ জমা পড়ার পরে কয়েকজনকে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। পরে পুরসভায় একপ্রস্ত শুনানিও হয়। অবশ্য এরপর আর তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কোনও অজ্ঞাত কারণে ওই ফাইল ধামাচাপা পড়ে যায়।
এ নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। শহরের কংগ্রেস কাউন্সিলর সৌমেন খানের কথায়, “মেদিনীপুরের নান্নুরচকের জলপ্রকল্পটি পুরনো। শুনেছি পুরসভার জমি বেদখল হয়েছে। তাও পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’ শহরের আর এক বিরোধী কাউন্সিলরের কটাক্ষ, “রাস্তার দু’ধারও তো দখল হয়ে যাচ্ছে। সেখানেও পুরসভা নিশ্চুপ।”