দিঘার জাতিমাটিতে হেলিপ্যাড তৈরির কাজ শেষ। ছবি: সোহম গুহ।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই মমতা ঘোষণা করেছিলেন দিঘাকে ‘গোয়া’ বানাবেন। সেই মতো সৈকত শহরের সৌন্দর্যায়নে একগুচ্ছ পরিকল্পনার ঘোষণাও করেছিলেন তিনি। সেই সৌন্দর্যায়নের কাজ কতটা শেষ হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এরই মধ্যে আবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে উড়ান মানচিত্রে নয়া সংযোজন হতে চলেছে এই সৈকত শহর। তিন দিনের জেলা সফরে এসে দিঘায় হেলিকপ্টার উড়ানের সূচনা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিঘা থেকে হেলিকপ্টার চেপেই কলকাতা ফিরবেন তিনি।
এর আগে হলদিয়া, দুর্গাপুর, শান্তিনিকেতন, মালদহ –প্রতিটি শহরেই হেলিকপ্টার পরিষেবার উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। কিন্তু যাত্রীর অভাবে দিন কয়েকের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল সেই পরিষেবা। তাই নতুন করে এত টাকা খরচ করে দিঘার এই হেলিকপ্টার পরিষেবা নিয়েও উঠতে শুরু করেছে নানা প্রশ্ন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ২০১২ সালে দিঘায় এসে পর্যটন বিকাশ ও পর্যটকদের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ‘দিঘা-কলকাতা’ হেলিকপ্টার উড়ান পরিষেবা চালুর কথা ঘোষণা করে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতবার মুখ্যমন্ত্রী দিঘায় এসে উড়ান ব্যবস্থা চালু না হওয়ার জন্য হেলিপ্যাড তৈরির জমি সমস্যাকে দায়ী করেন। দিঘার জনসভাতেই হেলিপ্যাড তৈরির জমি সমস্যা কাটিয়ে উড়ান পরিষেবা দ্রুত চালু করার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশও দিয়ে যান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর দিঘার প্রস্তাবিত দত্তপুরের বদলে জাতিমাটিতে নতুন হেলিপ্যাড তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। উড়ানের পরীক্ষামূলক মহড়ার পর দিঘার জাতিমাটিতেই হেলিপ্যাড তৈরিতে সম্মতি জানায় দিঘা -কলকাতা উড়ান পরিষেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত পবনহংস কর্তৃপক্ষ। পবনহংস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হেলিপ্যাড তৈরির সবুজ সঙ্কেত পেয়ে দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ পূর্ত দফতরের সহযোগিতায় জাতিমাটিতে প্রায় তিন একর জমির উপর প্রায় ৫৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নতুন হেলিপ্যাড তৈরি করে।
জেলা প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ২১ ডিসেম্বর তিনদিনের সফরে পূর্ব মেদিনীপুরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। নন্দীগ্রামের তেখালিতে ওইদিন একটি জনসভা করবেন তিনি। তেখালি জনসভাতেই দিঘা সহ জেলার একগুচ্ছ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসও করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ২৩ ডিসেম্বর দিঘায় হেলিকপ্টার উড়ানের সূচনা করবেন। তারপর ওই হেলিকপ্টার চেপে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।
আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দিঘায় পর্যটকদের আসার সুবিধার জন্য মমতা দুরন্ত এক্সপ্রেস চালু করেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগেই কম যাত্রীর কারণ দর্শিয়ে সেই ট্রেন বাতিল করে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তার বদলে চালু হয়েছে নতুন সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার কথা ভেবে মুখ্যমন্ত্রী হলদিয়া, দুর্গাপুর, শান্তিনিকেতন থেকে উড়ান পরিষেবা চালুর ঘোষণা করেছিলেন। সেখানে ভর্তুকি দিয়েও যাত্রী মেলেনি। তাই ওই তিনটি রুট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অন্ডাল ও মালদহ থেকেও মাস খানেক উড়ানের পর যাত্রী কম থাকায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে পরিষেবা। বালুরঘাটেও পরিষেবা অনিয়মিত। বিরোধীদের অভিযোগ, যেখানে ট্রেনেই এত কম টাকা ভাড়ায় যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে হেলিকপ্টারের মতো খরচসাপেক্ষ পরিষেবায় মানুষ আগ্রহ পাবে তো? তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এত টাকা খরচ করে উড়ান পরিষেবা চালুর পরও সেগুলো যখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন নতুন করে আবার উড়ান পরিষেবা চালু করা হচ্ছে কেন?
সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আশিস প্রামাণিকের অভিযোগ, ‘‘সামনে বিধানসভা নির্বাচন। মমতা বরাবরই চমক দিতে ভালবাসেন। এই নতুন উ়ড়ান পরিকল্পনা চমক ছাড়া আর কিছু নয়।’’ রামনগরের কংগ্রেস নেতা দীপক দাসও বলেন, ‘‘এর আগে ট্রেন চালু করেও অসাধারণ কোনও উন্নতি হয়নি। যাত্রী কম থাকায় দুরন্ত এক্সপ্রেসকে তুলে দিতে হয়েছে। উড়ানের ক্ষেত্রেও একই হবে।’’ তবে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু নিয়ে আশাবাদী জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, বিরোধীদের অপপ্রচারে কান না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা করছেন তা দিঘার উন্নতির জন্যই।
সময়ই বলে দেবে দিঘার উড়ান দূরপাল্লার হয় কি না!