জুন মালিয়া। —ফাইল চিত্র।
মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার (ডিএসএ) তরফে সিএবি- তে (ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল) গিয়েছিলেন জুন মালিয়া। গত বছর। জুন মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক। জুনের বঙ্গ ক্রিকেট প্রশাসনে আগমন নিয়ে সেই সময় জল্পনা এবং আলোচনা, দুই চলেছিল। বছর ঘুরতে অন্য ছবি। সিএবি থেকে জুনকে সরাল ডিএসএ!
জুনের বদলে ডিএসএ- র তরফে সিএবি-তে পাঠানো হয়েছে সুজয় হাজরাকে। সুজয় তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। জুনের সঙ্গে সুজয়ের সম্পর্ক না কি ‘মধুর’ নয়, সম্পর্কে না কি ‘তিক্ততা’ রয়েছে, মেদিনীপুরে এই জল্পনা রয়েছেই। সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে সুজয়কে সিএবি-তে পাঠানো হয়েছে, মানছে ডিএসএ। মেদিনীপুর ডিএসএ-র সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীত তোরই বলেন, ‘‘সুজয় হাজরাকে সিএবি- তে পাঠানো হয়েছে।’’ সুজয়ও মানছেন, ‘‘ডিএসএ-র প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে সিএবি-তে পাঠানো হয়েছে। দায়িত্বটা ভালভাবে পালনের চেষ্টা করব।’’ ইতিমধ্যে একদিন সিএবি ঘুরে এসেছেন সুজয়। শীঘ্রই সিএবি- র এক বৈঠকে তাঁর যাওয়ার কথা। জানা যাচ্ছে, সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছে সুজয়ের। সুজয় মানছেন, ‘‘সিএবি সভাপতির সঙ্গে কথা হয়েছে।’’
গত বছর মেদিনীপুর ডিএসএ-র প্রতিনিধি হিসেবেই সিএবি-তে গিয়েছিলেন জুন। সেই সময়ে প্রতিনিধির নাম চেয়ে মেদিনীপুর ডিএসএ-র কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল সিএবি। তখন ডিএসএ-তে নির্বাচিত বোর্ড ছিল না। পদাধিকার বলে জেলার এই সংস্থার সভাপতি জেলাশাসক। তখন জেলাশাসক ছিলেন আয়েশা রানি। শোনা যায়, জেলাশাসকের ইচ্ছায় জুনের নাম মনোনীত করা হয়েছিল সেই সময়ে। পরে ডিএসএ-তে নির্বাচন হয়েছে। নতুন বোর্ড তৈরি হয়েছে। সংস্থার প্রতিনিধির নামে পরিবর্তন এনে সিএবি-কে কি নতুন চিঠি দেবে ডিএসএ, এই জল্পনা মেদিনীপুরের ক্রীড়া মহলে ছিলই। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ডিএসএ সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা প্রতিনিধি হিসেবে সুজয়কে সিএবি-তে পাঠাবে। সিএবি-কে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েও দেওয়া হয়। গত বছরের শেষের দিকে মেদিনীপুর ডিএসএ- তে নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচন ঘিরেও তৃণমূলের অন্দরের টানাপড়েন প্রকাশ্যে এসেছিল। প্রধানত, দু’টি প্যানেলই ছিল। একটি বিধায়ক দীনেন রায়দের। যে প্যানেলে ছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষ, তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা প্রমুখ। আরেকটি প্রাক্তন বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীদের। একটি প্যানেল রাখার চেষ্টা চলেছিল। চেষ্টা করেছিলেন জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বই। যদিও তা ফলপ্রসূ হয়নি। নির্বাচনে দীনেনদের প্যানেলই বিপুল জয় পেয়েছিল। ২০টি আসন ছিল। দীনেনদের প্যানেলের ১৮ জন জিতেছিলেন। আশিসদের প্যানেলের মাত্র ২ জন জিতেছিলেন।
ডিএসএ- র নির্বাচনের আগে আগেই মেদিনীপুর ডিএসএ-র প্রতিনিধি হিসেবে সিএবি-তে গিয়েছিলেন জুন। বিভিন্ন সাব- কমিটি থাকে সিএবি-তে। জুনকে বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সদস্য করা হয়েছিল। ডিএসএ- র নির্বাচনে মেদিনীপুরের বিধায়কের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ, কোনও ভূমিকা চোখে পড়েনি। তাঁর ‘প্রভাব’ যে ওই ভোটে থাকবে না, তা অবশ্য ভোটের আগেই স্পষ্ট করেছিলেন বিধায়ক। মেদিনীপুরে তৃণমূলের অন্দরের সমীকরণে জুনের অনুগামীদের সঙ্গে সুজয়ের অনুগামীদের ‘অবস্থান’ না কি দুই মেরুতে! দুই শিবিরের ‘সম্পর্ক’ না কি ‘মধুর’ নয়! ডিএসএ- র প্রতিনিধি হিসেবে সিএবি-তে জুনই থাকবেন, না কি প্রতিনিধি নামে পরিবর্তন আসবে, মেদিনীপুরে এ নিয়ে জল্পনা ছিলই। দেখা গেল, প্রতিনিধির নামে পরিবর্তনই এনেছে ডিএসএ। জুন অভিনেত্রী। ঘটনাপ্রবাহে তিনি এখন রাজনীতিকও এবং শাসক দলের বিধায়কও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বৃত্তে রয়েছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজনও।
ডিএসএ তো আর আপনার নাম প্রতিনিধি হিসেবে সিএবি- তে পাঠাল না? প্রতিনিধি নামে পরিবর্তন এনেছে বলে শুনেছেন নিশ্চয়ই? মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন বলছেন, ‘‘আমি এ সব নিয়ে কিছু বলব না। মানুষের কাজ নিয়েই আছি। আমার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। আমি মানুষের কাজ নিয়েই থাকব।’’