নোংরা প্লেটেই খাবার, দেখার লোক নেই

ধোসা থেকে চাউমিন, বিরিয়ানি থেকে লস্যি— পছন্দের খাবার পাতে পৌঁছে দিতে গজিয়ে উঠেছে অজস্র রেস্তোরাঁ। আর লোভনীয় খাবারের টানে সেখানে ভিড় জন্মাচ্ছে সাত থেকে সত্তর।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৭ ০২:০৮
Share:

অস্বাস্থ্যকর: রাস্তার ধারেই চলছে রান্না। খড়্গপুরের এক রেস্তোরাঁয়। —নিজস্ব চিত্র।

ধোসা থেকে চাউমিন, বিরিয়ানি থেকে লস্যি— পছন্দের খাবার পাতে পৌঁছে দিতে গজিয়ে উঠেছে অজস্র রেস্তোরাঁ। আর লোভনীয় খাবারের টানে সেখানে ভিড় জন্মাচ্ছে সাত থেকে সত্তর। কিন্তু এই সব রেস্তোরাঁর খাবার আদৌ স্বাস্থ্যকর কি না, নিয়ম মেনে সেই খাবার রান্না হচ্ছে কি না, এ সব দেখার অবশ্য কেউ নেই। কারণ, যিনি এ সব দেখবেন সেই ফুড ইন্সপেক্টরের পদ গত পাঁচ বছর ধরে ফাঁকা। তাই খড়্গপুর শহরে খাবারের গুণমান যাচাইয়ে বিশেষ ‘দায়’ নেই পুরসভার।

Advertisement

খড়্গপুর শহরে সবেধন নীলমণি একজনই ফুড ইন্সপেক্টর ছিলেন। তাও সে পাঁচ বছর আগের কথা। আগের ফুড ইন্সপেক্টর অবসর গ্রহণের পর নতুন করে আর কেউ আসেননি। তাই বড় রাস্তা থেকে গলিপথে কোনও নজরদারি ছাড়াই রমরমিয়ে চলছে রেস্তোরাঁ।

কোথাও ঘুপচি রান্নাঘরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চলছে রান্না আবার কোথাও রাস্তা দখল করেই গড়ে উঠেছে রান্নাঘর। রাস্তার ধুলো-বালিও মিশছে রান্নার সঙ্গে। খাওয়া-দাওয়ার পর নোংরা বাসন ধোওয়াও বড় বিচিত্র। একটি গামলায় সাবান জল নিয়ে তাতেই কয়েকশো থালা-বাটি পরিষ্কার করা হয়। আলাদা করে প্রতিটা বাসন পরিষ্কার করার সময় কোথায়। কেননা, তখন যে পরের ক্রেতার পাতে খাবার দেওয়ার তাড়া রয়েছে।

Advertisement

দিন দু’য়েক আগে স্বামীর সঙ্গে মোমো খেতে গিয়েছিলেন খড়্গপুরের মালঞ্চর গৃহবধূ দীপর্ণা হালদার। শহরের জগন্নাথ মন্দির রোডের বিখ্যাত মোমো খেতে গিয়ে দেখলেন দোকানে ভিড় উপচে পড়ছে। অনেক কষ্টে মোমো পেলেন বটে। কিন্তু নোংরা প্লেট দেখে গা গুলিয়ে উঠল দীপর্ণার। প্লেট বদলাতে বললে খানিক তর্ক-বিতর্কের পর নতুন প্লেটে ফের মোমো দিয়ে এল এক কর্মী। দীপর্ণার কথায়, “বড় দোকানের থেকে এ সব দোকানে খাবারে স্বাদ ভাল লাগে বলেই আসি। কিন্তু রান্না থেকে বাসন ধোওয়া কোনও কিছুতেই যত্ন নেই। আর এ সব দেখারও কেউ নেই।’’ শহরের প্রেমবাজারের বাসিন্দা দেবাশিস বেরার কথায়, “প্রতিদিনই রাস্তার ধারের দোকানের খাবার খেতে হয়। কিন্তু কোনও দোকানেই খাবারের গুণমান যচাইয়ে প্রশাসনের উদ্যোগ চোখে পড়েনি।”

নিয়ম অনুযায়ী, শহরের প্রতিটি দোকানে খাবারের গুণমান যাচাই করা উচিত পুরসভার। যদিও দীর্ঘদিন সেই কাজ বন্ধ। কৌশল্যায় রাস্তার ধারের একটি হোটেলের মালিক সৌতিক দত্ত বলছেন, “আমি ১০ বছর ধরে এই হোটেল চালাচ্ছি। কোনও দিন হোটেলে প্রশাসনের কেউ এসে খাবারের মান পরীক্ষা করেননি। আমার মনে হয় পুরসভার পক্ষ থেকে এই নজরদারি থাকা উচিত। তবে আমরাও সচেতন হতে পারব।” ঝাপেটাপুরের একটি চাউমিনের দোকানের মালিকও বলছেন, ‘‘পুরসভার কেউ এসে কোনও দিন খাবার পরীক্ষা করেননি। গুণমানের বিষয়ে আমার জানা নেই।” গোলবাজারে একটি মারোয়ারি লস্যির দোকানে দেখা গেল, লস্যির উপরে ভনভন করছে মাছি। তাই তৃপ্তি করে খাচ্ছেন ক্রেতারা। ওই দোকানের মালিক ধীরাজ জায়সবাল বলেন, “আমি তো দোকানের মেঝে সবসময় ফিনাইল দিয়ে ধুয়ে রাখি। রাস্তার ধারে দোকানে আর কী করতে পারি!”

এ নিয়ে কী বলছে পুরসভা? খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলছেন, “পুরসভার ফুড ইন্সপেক্টর অবসরগ্রহণের পরে আর নিয়োগ হয়নি। তাই আমাদের হাতে ক্ষমতা থাকলেও দোকানে দোকানে পরিদর্শন হয় না। এ ক্ষেত্রে আমরা জেলা এনফোর্সমেন্টের সঙ্গে একসঙ্গে অভিযানের পরিকল্পনা করছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement