বলপাই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের পর। নিজস্ব চিত্র
দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনে ভোটাভুটি। গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে আসতেই দলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি-সহ দুই নেতাকে সাসপেন্ড করেছিল তৃণমূল। অবশ্য তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। বুধবার বোর্ড গঠনের দ্বিতীয় দিনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল সবং ব্লকে।
মঙ্গলবার ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়েছিল। বাকি থাকা নারায়ণবাড়, সার্তা, বলপাই, মোহাড় ও চাঁদকুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে এ দিন বোর্ড গঠন হয়। তবে বোর্ড গঠন ঘিরে ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে এই ব্লকে। এ দিনও বলপাই, নারায়ণবাড়, মোহাড় গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোটাভুটির মাধ্যমে বোর্ড গঠিত হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও তৃণমূলের অন্দরের বিভাজনে এই ভোটাভুটির আয়োজন বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। বিশেষ কমিটির বাছাই করা প্রধান পদপ্রার্থীকে অস্বীকার করে পাল্টা নিজেদের মনোনীত প্রার্থীর প্রস্তাব দিয়েছিল তৃণমূলের একাংশ। দিনের শেষে হার মানতে হয়েছে তৃণমূলের বিশেষ কমিটির বাছাই করা প্রার্থীদের। স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন বলপাই গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিশেষ কমিটি গায়ত্রী পালকে প্রধান হিসাবে বাছাই করেছিল। কিন্তু এ দিন গায়েত্রীর বিরোধিতা করে প্রধান হিসাবে জেলার বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির বোন প্রতিমা প্রামাণিকের নাম প্রস্তাব করে তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠী। ভোটাভুটিতে গায়ত্রী ৬টি ও প্রতিমা ৯টি ভোট পান। এ বার নির্বাচনে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল ৯টি, বিজেপি ১টি, কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল ১টি ও সিপিএম সমর্থিত নির্দল ৪টি আসন দখল করেছিল। তাই প্রতিমা কাদের সমর্থনে ৯টি ভোট পেলেন তা নিয়ে শোরগোল পড়েছে। অমূল্যের কথায়, “গায়েত্রী পাল বিজেপি ও কয়েকজন নির্দলের ভোট পেয়েছেন। আর প্রতিমাকে ভোট দিয়েছে আমাদের লোকেরা এবং নির্দল থেকে আমাদের দলে আসা লোকেরা।” অবশ্য শাসক দলের অন্দরে অমূল্যের বিরোধী বলে পরিচিত সাংসদ মানস ভুঁইয়ার অনুগামী যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আবু কালাম বক্স বলেন, “প্রতিমা প্রামাণিক বিজেপি, সিপিএমের নির্দলদের সমর্থনে জিতেছেন। এসব দলবিরোধী কাজ করে দলের মুখে ওঁরা চুন-কালি মাখাচ্ছে। দল ব্যবস্থা নিক।”
এ দিন নারায়ণবাড় ও মোহাড়েও দেখা গিয়েছে একই ছবি। নারায়ণবাড়ে তৃণমূলের বিশেষ কমিটির বাছাই করা প্রধান পদপ্রার্থী সুভাষ মণ্ডলের বিরোধিতা করে জয়ী হয়েছেন নারায়ণ বেরা। আবার মোহাড়ে প্রধান পদপ্রার্থী রঞ্জন জানার বিরোধিতা করে প্রধান হয়েছেন প্রসাদ অধিকারী। এসবে মাঝে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়ে সিপিএম নেতা চন্দন গুছাইত বলেন, “যেখানে আমাদের সমর্থিত নির্দল জিতেছিল তাঁরা বোর্ড গঠনে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীকে সমর্থন করে জিতিয়েছে।” বিষয়টি নিয়ে ‘অস্বস্তি’তে পড়েছে জেলা নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “সবং ব্লকে কয়েকটি অঞ্চলে দলের বিরুদ্ধে গিয়ে বোর্ড গঠনে ভোটাভুটি হয়েছে। এসব বরদাস্ত করা হবে না। আমরা দ্রুত কড়া পদক্ষেপ করব।” প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার নওগা ও দেভোগ অঞ্চলে এভাবেই ভোটাভুটির মাধ্যমে বোর্ড গঠন হওয়ায় সাসপেন্ড করা হয়েছিল দলের দুই নেতাকে।