সংরক্ষণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকায় পঞ্চায়েতে অনেকেরই আসন টলোমলো। আর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন সংখ্যাও অনেক। সংরক্ষণের জেরে প্রার্থী তালিকায় স্থান পাওয়া অনিশ্চিত জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি, কর্মাধ্যক্ষ থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি সহ পঞ্চায়েতের বিভিন্ন পদে থাকা তৃণমূলের নেতাদের।
কিন্তু তাতে কী! সংরক্ষণ হলেও হাল ছাড়তে নারাজ ওই সব নেতারা। তাঁদের অধিকাংশই এখন অন্য এলাকায় প্রার্থী হওয়ার জন্য আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন। অনেকে নতুন এলাকায় গিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মী, সমর্থকদের মন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কারণ, তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, দলের নিচুতলার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে। ভোটের দিন ঘোষণার পর মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হয়ে গেলেও এখনও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় এমনিতেই উদ্বেগে তৃণমূলের জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েতের বহু পদাধিকারী।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের যে জেলাপরিষদ আসনে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি জিতে এসেছিলেন এবার তা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। ফলে ওই আসনে আর প্রার্থী হতে পারছেন না তিনি। ২০০৮ সালে জিতে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, গতবার জিতে জেলা সহ-সভাধিপতি পদে বসা নন্দীগ্রামের এই দাপুটে নেতা অবশ্য হাল ছাড়তে নারাজ। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের তিনটি আসনের মধ্যে দুটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ও একটি সাধারণের জন্য। পাশের এলাকা হলেও ওই সাধারণ আসনটি পেতে এখন মরীয়া সুফিয়ান। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার আসনটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে ঠিক। তবে নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লকে সব এলাকাতেই আমার নিবিড় জনসংযোগ রয়েছে। দলের জেলা নেতৃত্ব যে নির্দেশ দেবেন তা মেনেই ভোটে লড়াই করব।’’
একই ছবি ভাবে নন্দকুমার পঞ্চায়েত সমিতিতে। বিদায়ী সভাপতি সুকুমার বেরার আসনটি এবার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। সুকুমারবাবুও চান পাশের এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রার্থী হতে। এর জন্য ওই এলাকার নেতা- কর্মীদের সমর্থন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, ‘‘দলীয় নেতৃত্ব যেখানে প্রার্থী হতে বলবেন, সেখানেই লড়াই করতে চাই। দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে আমার।’’
তবে শাসক শিবিরের উল্টো ছবি বিরোধী বামশিবিরে। সংরক্ষণের কোপে পড়ে দু’বারের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি তথা বিদায়ী বোর্ডের বিরোধী দলনেতা নিরঞ্জন সিহি এবার ভোটের ময়দানে নেই। ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রবল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পাঁশকুড়া-১ ব্লকে যে আসন থেকে জিতেছিলেন নিরঞ্জনবাবু এবার তা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। ব্লকের বাকি দুটি আসনের একটি মহিলা অন্যটি অনগ্রসর শ্রেণির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। নিরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘আমার জেতা আসন-সহ বাকি দু’টিও এবার সংরক্ষণের আওতায়। তাই এ বার প্রার্থী হচ্ছি না।’’