বন্ধ বোম্বে সিনেপ্লেক্স। ফাইল চিত্র।
পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম দুই জেলার প্রায় সব সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমা হল আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। টিমটিম করে চলছিল ঘাটাল মহকুমার দু’একটি হল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেগুলিরও ঝাঁপ বন্ধের উপক্রম। একই ছবি মাল্টিপ্লেক্সেও।
গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে সারা দেশে লকডাউন হয়েছিল। এ বার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সারা দেশে না হলেও বিভিন্ন রাজ্য লকডাউনর পথে হেঁটেছে। পশ্চিমবঙ্গেও জারি হয়েছে নানা বিধিনিষেধ। যা কার্যত লকডাউনেরই সামিল। ফের বন্ধ হয়েছে সিনেমা হল ও মাল্টিপ্লেক্সের দরজা। সিনেমা হল করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আদর্শ স্থান, এ বিষয়ে একমত ছিলেন বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই। তাই গত বছর লকডাউনের শুরু থেকেই সিনেমা হল ও মাল্টিপ্লেক্স বন্ধ হয়েছিল। অক্টোবরে আংশিক দর্শক নিয়ে সিনেমা হল খোলার বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে দেশের সমস্ত সিনেমা হলে ১০০ শতাংশ দর্শকাসন ভর্তি করার অনুমতি দেয় কেন্দ্র। কিন্তু হলের মালিক, কর্মী ও সিনেমাপ্রেমীদের সেই খুশি স্থায়ী ছিল মাত্র কয়েক মাস। এই পরিস্থিতিতে সংসার চালানোই দায় হল ও মাল্টিপ্লেক্সের কর্মীদের।
খড়্গপুরর শহরে গেটবাজারের বোম্বে সিনেপ্লেক্স গত বছর থেকেই কার্যত বন্ধ। সেখানকার পাঁচ জন কর্মীর মধ্যে দু’জন অন্যত্র কাজ খুঁজে নিয়েছেন। বাকি তিন জন আপাতত হল সাফসুতরো করার কাজ করছেন। বোম্বে সিনেপ্লেক্সের মালিক অশ্বিনী গোকুল দাস বলেন, ‘‘আমাদের যে কী চলছে সেটা আমরাই জানি। গত বছর থেকে সিনেপ্লেক্স বন্ধ। কর্মীদের তারপরেও মাঝে বেতন দিচ্ছিলাম। কিন্তু ফের করোনার প্রকোপে জোর ধাক্কা খাচ্ছি। জানি না কবে অন্ধকার সিনেপ্লেক্সে আলো জ্বলবে!’’
ঘাটাল শহরে ভারতী সিনেমা হল কয়েক বছর আগেই বন্ধ হয়। আর মতি-র দরজা বন্ধ হয়েছে গত বছরের লকডাউন থেকে। চন্দ্রকোনার রয়্যাল এবং রামজীবনপুরের দেবলীন অবশ্য প্রথম লকডাউনের পরেও চালু ছিল। তবে এ বার বিধিনিষেধ ওঠার পরে কী হবে, কেউ বলতে পারছেন না। দেবলীন সিনেমা হলের ম্যানেজার সঞ্জয় মল্লিক বলছিলেন, “গত লকডাউনের পরে এমনিতেই দর্শক ছিল না লোকসান করেই তিনটি শো চালাচ্ছিলাম। এখনও তাও বন্ধ। দু’জন স্থায়ী এবং একজন অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। তাঁদের যতটা পারছি সাহায্য করছি।” রয়্যাল সিনেমা হলের কর্মী অঞ্জন গোস্বামীর আক্ষেপ, “মালিকের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। আর হল খুলবে কি না তাও জানতে পারছি না। পাঁচ জন কর্মী রয়েছি। আমাদের জমানো পুঁজিও শেষ। এরপর কী করে চলবে জানি না।”
ঝাড়গ্রাম শহরে এক সময়ে চারটি সিনেমা হল ছিল। বহু বছর আগেই সেগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একটি সিনেমা হলের ভবন ভেঙেও ফেলা হয়েছে। বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদার একটি সিনেমা হলও বহু বছর ধরে বন্ধ। ঝাড়গ্রাম থেকে সিনেমা দেখতে হলে খড়্গপুরেই যেতে হয়। করোনা আবহে সে সব এখন বন্ধ। ঝাড়গ্রাম জেলা হওয়ার পরে কম আসনের সিনেপ্লেক্স চালু করা নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু করোনা আবহে তা এখন বিশবাঁও জলে। (তথ্য সহায়তা: দেবমাল্য বাগচী ও কিংশুক গুপ্ত)