পুজোর থিমে নোটের লড়াই। মেদিনীপুর শহরে। ছবি:সৌমেশ্বর মণ্ডল, কিংশুক আইচ, রামপ্রসাদ সাউ।
কলেজ মোড়ের সরস্বতী পুজোতে বরাবরই থাকে অন্য ছোঁয়া। মেদিনীপুর শহরে এই চত্বরের পুজোর থিমে জড়িয়ে থাকে রাজনীতি। থিমযুদ্ধে পরস্পরকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই চলে। এ বার থিমের ময়দানে টেক্কা দিতে নজর কাড়ছে নোট চর্চা।
শহরের এই এলাকায় প্রায় ২০টি পুজো হয়। মঙ্গলবার দিনভর চলেছে পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রায় প্রতিটি পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র-যুব সংগঠন। কোথাও পুজোর নেপথ্যে টিএমসিপি, সিপি। কোথাও বা এসএফআই, এবিভিপি। নোট কাণ্ডে একে অপরকে বিঁধতে প্রস্তুত সকলেই। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএমের ছাত্র-যুব সংগঠন প্রভাবিত পুজোগুলো নানা থিম তুলে এনে বিঁধছে কেন্দ্রকে। বিজেপির ছাত্র-যুব সংগঠন প্রভাবিত পুজোগুলো পাল্টা থিমে বিঁধছে বিরোধী-শিবিরকে।
শুধু মোদী নন, অরুণ জেটলি থেকে সনিয়া গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অধীর চৌধুরী, মানস ভুঁইয়া— থিম যুদ্ধে আছেন সকলেই। ব্যঙ্গচিত্র থেকে ছড়ায় জমে উঠেছে লড়াই। নোট বাতিলকে বিঁধে কোনও মণ্ডপে লেখা রয়েছে ‘যব ক্যাশ হো আউট অফ কন্ট্রোল, মেরে প্যায়ারে দেশবাসীও কো বুদ্ধু বানাকে বোল, ভাইয়া অল ইজ্ ওয়েল।’ আবার কোনও মণ্ডপে মোদীকে কটাক্ষ, ‘৫৬ ইঞ্চির ছাতির মালিক মিথ্যে কথায় দক্ষ, আড়াই বছর পেরিয়ে গেল কোথায় ১৫ লক্ষ?’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধে বিজেপির পাল্টা প্রচার, ‘সাধের বিশ্ব বাংলা, আদতে প্রচার হ্যাংলা। কোটি টাকার ঢপ, দিদির দেওয়া কড়াই নিয়ে ভাজো আলুর চপ।’
কলেজ মোড়ের এক পুজোর উদ্যোক্তা যুব তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির কথায়, “নোট বাতিলের ফলে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। ভোগান্তিও হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই পুজোর থিমে এই বিষয়ই বেছে নেওয়া হয়েছে।” অন্য আর এক পুজোর উদ্যোক্তা, ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ-সভাপতি মহম্মদ সইফুলের কথায়, “এখন নোট বাতিলই বড় বিষয়। পুজোর থিমে নোট বাতিলের প্রতিবাদ তো থাকবেই।’’ মোদীর পাল্টা মমতাকে খোঁচা দিয়ে বিজেপির প্রাক্তন যুব নেতা শুভজিত রায়ের খোঁচা, “আর কেউ নন। নোট নিয়ে দিদিই ঘোঁট পাকানোর চেষ্টা করেছেন। তবে সাধারণ মানুষের সমর্থন পাননি। আসলে মানুষ বুঝে গিয়েছেন, দিদি নিজের স্বার্থে পথে নেমেছেন, মানুষের স্বার্থে নয়।’’
নোট কাণ্ডের রাজনৈতিক চাপানউতোরের আবহে পুজো জমে ওঠা শুধু সময়ের অপেক্ষা।