—প্রতীকী চিত্র।
তাঁর মৃত্যু আর পাঁশকুড়ায় তাঁর দলের শক্তিক্ষয়ের শুরু প্রায় একই সময়ে। বলা যেতে পারে, গীতা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরেই নিজেদের জায়গা হারাতে থাকে সিপিআই।
লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হওয়ার পর প্রয়াত সিপিআই সাংসদ গীতা মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর দল সিপিআই নতুন করে চর্চার শিরোনামে। গীতা মুখোপাধ্যায়কেই বলা যেতে পারে এই বিলের প্রথম কাণ্ডারি। মহিলাদের এই সংরক্ষণের দাবিতে প্রথম লড়াই শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরে।
কিন্তু তেইশ বছর আগে ২০০০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই পাঁশকুড়ায় শক্তি হারাতে শুরু করে সিপিআই। গীতা মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক বিচরণভূমিতে এখন তৃণমূলের একচ্ছত্র দাপট। প্রধান বিরোধী হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। আর লড়াইয়ের ময়দানে অস্তমিত সিপিআই।
১৯৭৭ সালে এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসে বামফ্রন্ট। তখন অবশ্য সিপিআই বামফ্রন্টের বাইরে ছিল।ওই বছর পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভায় সিপিআইয়ের প্রার্থী ছিলেন ওমর আলি। তাঁর প্রতিপক্ষ সিপিএমের ফয়েজ আলি। সিপিএম প্রার্থীকে ৩৫০ ভোটে হারিয়ে দেন ওমর। ১৯৮০ সালে সিপিআই বামফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়। তার পর থেকে দীর্ঘ বাম জামানায় পাঁশকুড়া কেন্দ্রে সিপিএম কোনও দিন প্রার্থী দেয়নি। প্রতিটি নির্বাচনে সিপিআই প্রার্থীকেই সমর্থন করে সিপিএম।
১৯৮০ সাল থেকে আমৃত্যু পাঁশকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন সিপিআইয়ের গীতা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ২০০০ সালে গীতা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরই পাঁশকুড়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিক্রম সরকার তৃণমূলের টিকিটে জিতে সাংসদ হন। ২০০৪ লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য ফের ফিরে আসে সিপিআই। গুরুদাস দাশগুপ্ত পাঁশকুড়া কেন্দ্র থেকে জেতেন। ২০০৯ সালে পাঁশকুড়া লোকসভা লুপ্ত হয়ে গঠিত হয় ঘাটাল লোকসভা। সেবারও গুরুদাস জয়ী হন। ১৯৯৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত পাঁশকুড়া পশ্চিমের বিধায়ক ছিলেন সিপিআইয়ের চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর।
বাম আমলে পাঁশকুড়া বরাবর ছিল সিপিআইয়ের শক্ত ঘাঁটি ছিল। কিন্তু গীতা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর পাঁশকুড়ায় জমি হারাতে শুরু করে সিপিআই। ২০২১ সালে মারা যান পাঁশকুড়ার তিন বারের সিপিআই বিধায়ক চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর। পাঁশকুড়া ব্লকে সিপিআই কার্যত নেতৃত্বহীন হয়ে যায়। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাঁশকুড়া ব্লকে বামফ্রন্ট মাত্র ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে জয় পায়। তার মধ্যে ১১টি জেতে সিপিএম। সিপিআই পায় ৩টি আসন।
দলে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব মেনে নিয়ে সিপিআইয়ের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য নির্মল কুমার বেরা বলেন, "গোটা রাজ্যেই বামফ্রন্ট শক্তি হারিয়েছে। তার প্রভাব আমাদের দলেও পড়েছে। আসলে সভ্যতার ইতিহাসে পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এটা মেনে নিতে হবে। তবে এটা ঠিক যে, গীতা মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যাক্তিত্বের মৃত্যুর পর পাঁশকুড়া এলাকায় সিপিআই বেশ ধাক্কা খায়। সেই থেকে পাঁশকুড়ায় দলের শক্তিক্ষয় শুরু হয়।"