ঝাড়গ্রামে পর্যটন বিশেষজ্ঞ দল। রোহিণীর মানগোবিন্দপুরে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
কচ্ছপের গতি দেখে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী খরগোশ ঘুমিয়ে পড়েছিল। তার পরিণামটা সকলের জানা। বন দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, হাতির দুলকি চাল দেখে খরগোশের ভুলই করেন অনেক পর্যটক। আর তখনই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। যেমনটা ঘটেছিল গত সোমবার। ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের কেঁউদিশোলের জঙ্গলে।
মানুষের তুলনায় প্রয়োজনে হাতি তিনগুণ গতিবেগে জোরে পা চালাতে পারে। তাই হাতির দু’শো মিটার দূরে থাকাটাও নিরাপদ নয়, বরং বিপদকে ডেকে আনা, এমনকি মৃত্যুরও শামিল! পর্যটকদের সচেতন করতে এবার এমনই প্রচারে উদ্যোগী হচ্ছে পর্যটন সংস্থা। বুধবার জেলার গ্রামীণ পর্যটনের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে এসেছে বেসরকারিস্তরের এক পর্যটন-বিশেষজ্ঞ দল। তাঁরাও মানছেন, জঙ্গলমহলের হাতির স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে পর্যটকদের বেশিরভাগই ওয়াকিবহাল নন। তাই ঘটে দুর্ঘটনা। গত সোমবার ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের কেঁউদিশোলের জঙ্গলে ঢুকে হাতির ছবি ও নিজস্বী তোলার সময়ে দাঁতালের হানায় এক তরুণ পর্যটকের মৃত্যু হয়।
প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদার বলছেন, ‘‘গড়পড়তা মানুষজন (১৫-৩৫ বছর বয়সী) সাধারণত প্রতি ঘণ্টায় ১২ কিমি গতিবেগে দৌড়তে পারেন। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই গতিবেগ আরও কম। আর গাছগাছালিতে ঘেরা ঘন জঙ্গলে মানুষের দৌড়নোর গতিবেগ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম হয়। জঙ্গলে মাটি উঁচুনিচু থাকায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। হাতির তাড়া খেয়ে পালানোর সময়ে পড়ে গিয়ে দাঁতালের নাগালে আসায় হামেশাই জখম অথবা মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক দশকের পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, হাতির স্বাভাবিক ধীর গতি প্রতি ঘন্টায় ছ’কিমি। কিন্তু দ্রত পা চালাতেও হাতিদের জুড়ি নেই। প্রয়োজনে কয়েকগুণ বাড়িয়ে প্রায় ৪০ কিমি প্রতি ঘন্টায় হাতি পা চালাতে পারে। তাই দুর থেকেও হাতিদের উত্যক্ত না করাই উচিত।’’
পর্যটন দফতর স্বীকৃত ‘ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম’-এর কর্তা সুমিত দত্ত বলছেন, ‘‘প্রতিটি অতিথিশালা ও হোম স্টে-র রিপেসপশনে হাতি ও বন্যপ্রাণী সম্পর্কে নিয়মাবলি সুনির্দিষ্ট ভাবে লেখা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দৌড়ের গতিবেগের তুলনায় হাতির জোরে হাঁটার গতিবেগ যে তিনগুণ সেটাও লেখা থাকবে। জঙ্গলে না ঢোকা, বন্যপ্রাণীদের উত্ত্যক্ত না করার বিষয়েও বিশদে তথ্য নিয়মাবলিতে সংযুক্ত করা হবে।’’ ঝাড়গ্রামের ডিএফও শেখ ফরিদ জানিয়েছেন, পর্যটকেরা জঙ্গলে ঢুকলে বেআইনি অনুপ্রবেশের মামলা রুজু করা হবে।