থেমে-থাক: খড়্গপুরের বোগদা এলাকায় রাস্তা বন্ধ করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব চিত্র
আজকের সমস্যা। আগামীর স্বস্তি।
কিন্তু উন্নয়নের জন্য যদি বন্ধ থাকে রাস্তা। দিনের পর দিন পথে হয় দেরি!
চেনা পথ ছেড়ে অন্য বাঁক নেয় রেল-রাজনীতি।
উন্নয়ন নিয়ে রেল-পুরসভা দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। নতুন নয় তা নিয়ে রাজনীতি। পুরসভা হোক বা লোকসভা। ভোট এলেই রেলশহর খড়্গপুরে চেনা পথে বইতে শুরু করে রেল-রাজনীতি। রাজ্যে শাসক তৃণমূল সুর চড়ায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। আবার রাজ্যের বিরোধী বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলে। প্রতিশ্রুতি দেয় রেল উন্নয়নের।
শহরে বন্ধ চারটি রাস্তা। কোনওটি প্রায় একমাস। কোনওটি ছ’মাস। একটি রাস্তা বন্ধ হয়েছে সম্প্রতি। একটি রাস্তায় আবার হাইট বার বসানোয় যানবাহন চলাচলে তৈরি হয়েছে সমস্যা। সার্বিক ভাবে বাড়ছে যানজট ও ভোগান্তি। বাড়ছে ক্ষোভ। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের নেতারা যথারীতি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন। জনমন বিপক্ষে যেতে পারে আঁচ করে এ ক্ষেত্রে কিন্তু রেলের পাশে থাকছেন না রাজ্যের বিজেপি নেতারা। বরং রেল আধিকারিকদের একাংশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। ডিআরএমকে চিঠি লিখে রাস্তা চালুর আবেদন জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ। বিজেপি জেলা সহ সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্য মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিলেও, রেলের রাস্তা বন্ধের সিদ্ধান্তে পুরপ্রধানের ‘হাত’ দেখেছেন। গৌতম বলেন, ‘‘মানুষের চোখে বিজেপি সরকার পরিচালিত রেল মন্ত্রককে বদনাম করতে পুরপ্রধান ও ডিআরএম হাত মিলিয়ে এসব করছে। আমরা এসব নিয়ে সরব হয়েছি। মানুষের পাশে রয়েছি।”
এমন ঘটনাকে বিজেপির দ্বিচারিতা বলে সরব হয়ে রেলের বঞ্চনার প্রতিবাদে জমায়েত করেছে তৃণমূলও। ওই জমায়েত থেকে রাস্তা বন্ধ, ভাঙা কোয়ার্টার, বস্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ-সহ নানা বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “বিজেপি দ্বিচারিতা করছে। ওঁদের তো সাংসদ। ওঁরা কেন্দ্রে বলে সমস্যার সমাধান করুক।”
যোগাযোগের উন্নতি প্রতিটি শহরের মূল চাহিদা। কিন্তু রেলশহর খড়্গপুরে রেল চারটি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় বাড়ছে ভোগান্তি। শহরের ইন্দার বাসিন্দা প্রহ্লাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখন ইন্দা থেকে রেল হাসপাতাল যেতে তিনটি রাস্তা বদলে ঘুরপথে রেল হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি গাড়ির জ্বালানি, রিকশা ভাড়া ইত্যাদি বেশি লাগছে। রাজনৈতিক দলগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একদিন প্রতীকী কর্মসূচি করে দায় সারছে। আর রেল উদাসীন হয়ে রয়েছে।”
সামনেই পুজো। এভাবে চলতে থাকলে শহর যে এ বার যানজটে ফাঁসতে চলেছে তা এখন থেকেই আঁচ করতে পারছে শহরবাসী।
কী বলছে রেল? ডিআরএম কে রবিনকুমার রেড্ডি বলেন, “আমরা রেলের যাত্রী, উপভোক্তা এবং রেল কর্মীদের জন্য পরিকাঠামো উন্নতির উদ্দেশ্যে সমস্ত কাজ করছি। আশা করছি সকলের সহযোগিতা পাব।” খড়্গপুর রেলের সিনিয়ার ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (হেড কোয়ার্টার) সৌরভ রাজ বলেন, “মানুষের জন্য উন্নয়নমূলক নানা কাজ করা হচ্ছে শহরে। তাই উন্নত কিছু পেতে গেলে মানুষকে তো কিছুটা ত্যাগও করতে হবে।”
বলা তো যায় না, আজকের সমস্যা যদি আগামীর ভোটে প্রভাব ফেলে! তাই কি শুরু হয়েছে দূরত্ব তৈরি!