খড়্গপুরের খরিদায় উদ্ধার হওয়া বোমা। নিজস্ব চিত্র।
ভোট মিটলেও কাটছে না সন্ত্রাসের ছায়া। বৃহস্পতিবার তিনটি তাজা বোমা উদ্ধার হল খড়্গপুর শহরের খরিদা মন্দিরতলা শিবমন্দির সংলগ্ন এলাকায়। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আর এ নিয়ে ভোট-পরবর্তী চাপানউতোর শুরু হয়েছে শহরে।
বিরোধীদের অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ওই বোমা মজুত করেছিল তৃণমূল। তারা গোটা ঘটনার তদন্তের দাবিও তুলেছে। খড়্গপুর পুরসভার বিরোধী দলনেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, ‘‘এই বোমাগুলি নির্বাচনের দিনে শহরে ব্যবহার করবে বলে ঠিক করেছিল তৃণমূল। কিন্তু নির্বাচনের দিন তৃণমূলের একটি অংশ বিজেপির দিকে ভোট দেওয়ায় তাঁরা বোমাবাজিতে জড়াতে চায়নি। এখন সেই বোমাই উদ্ধার হচ্ছে।’’ এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক মানতে নারাজ তৃণমূল। তবে দলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী মানছেন, ‘‘শহরে দুষ্কৃতী ও দুষ্কর্ম বেড়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের হাত ধরেই শহরে দুষ্কৃতীরা প্রবেশ করেছে। দায় তাই কংগ্রেসকে নিতে হবে।’’
ভোট এলেই দুষ্কৃতীদের দাপট বাড়ে রেলশহরে। গুলি-বোমা চলে, ছড়ায় আতঙ্ক। গত পুর-নির্বাচনের পরে বোর্ড গঠনের আগেও মাফিয়া রাজ দেখেছিলেন শহরবাসী। বিভিন্ন বিরোধী দলের কাউন্সিলরের বাড়িতে বোমাবাজি ও শূন্যে গুলি চলার মতো ঘটনা ঘটেছিল। শাসকের সেই সন্ত্রাসে ঘর ভেঙেছিল বিরোধীদের। বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর দলবদল করে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। সেই সময় পুলিশ-মাফিয়া যোগসাজশ নিয়ে বলে সরব হয়েছিল কংগ্রেস, বিজেপি ও বামেরা।
এ বারও ভোট আসতেই তৃণমূল সন্ত্রাস চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিল বিরোধীরা। বিজেপির সভায় হামলার অভিযোগও উঠেছিল রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর বিরুদ্ধে। ১১ এপ্রিল খড়্গপুরে ভোটের আগের রাতেও শহরের তৃণমূল প্রভাবিত রেল ওয়ার্ডের একটি কোয়ার্টারে বোমা বাঁধার কাজ চলছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ছবি তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর হাত ধরে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ে। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, নির্বাচনের দিনে শহরের উত্তরাংশে ওই বোমা ব্যবহারের কথা ছিল। তবে তা হয়নি। পুলিশকে বোমা উদ্ধার করতেও দেখা যায়নি।
এ দিন শহরের মন্দিরতলার ওই শিবমন্দির সংলগ্ন মাঠে কয়েকজন একটি চটের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন। স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে খবর যায় পুলিশে। এর পরে পুলিশ এসে ওই ব্যাগ থেকে তিনটি তাজা বোমা উদ্ধার করে। এ দিন যে এলাকায় বোমা উদ্ধার হয়েছে সেই এলাকার বাসিন্দা যুব তৃণমূল নেতা রাজা সরকার যদিও বলেন, “কেউ নির্বাচনে এই বোমাগুলি ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা কোনওদিন এ সব সমর্থন করি না। তাই বোমা ব্যবহারের সাহস কেউ পায়নি।’’