যানজটের এই ছবি নিত্যদিনের। মেদিনীপুর শহরের কেরানিতলা মোড়ে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।
শুধু অটোয় রক্ষা নেই, দোসর টোটোও!
যানজটের জোড়া ফলায় এক বছর ধরে বিদ্ধ মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দারা। গলদঘর্ম পুলিশও। কিন্তু পুজোর দিনগুলিতেও কি ছবিটা পাল্টাবে না?
এই প্রশ্নে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী থেকে পুজো উদ্যোক্তা, এমনকী পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ— সব মহলেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ছে এখন থেকেই। জেলা পুলিশ অবশ্য ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। তবু প্রত্যয় হচ্ছে না ভুক্তভোগীদের।
সম্প্রতি পুলিশ-কর্তাদের নিয়ে মেদিনীপুরে বৈঠক করেন জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। বৈঠকে পুজোর দিনগুলিতে মেদিনীপুর এবং পাশের খড়্গপুর শহরের পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। জেলা পুলিশ সুপার জানান, পুজোর দিনগুলিতে যানজট এড়াতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একটা পরিকল্পনা হয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হবে।
কেমন সে পদক্ষেপ?
পুলিশ সূত্রের খবর, পুজোর আগেই অবৈধ অটো-টোটোর বিরুদ্ধে অভিযান হতে পারে। প্রাথমিক ভাবে মেদিনীপুর শহরের ১০টি বড় পুজো ও খড়্গপুর শহরের ১১টি বড় পুজোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যানজট এড়াতে ওই সব পুজো মণ্ডপের আশপাশে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা থাকবে। দুই শহরেই লরি, বাস এবং অন্য গাড়ি ঢোকা-বেরোনোর ক্ষেত্রে কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মালবাহী ভারী গাড়ি ঢুকবে না। মেদিনীপুর শহরে কালেক্টরেট মোড়, কেরানিতলা, পঞ্চুরচক-সহ পাঁচটি এলাকায় ‘পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র’ খোলা হতে পারে। শহরের ৩৩টি মোড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। খড়্গপুরেও মথুরাকাটি, কৌশল্যা, পুরাতন বাজার-সহ সাতটি এলাকায় ‘পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র’ হতে পারে। দুই শহরেই পুজোর দিনগুলিতে অস্থায়ী ভাবে কিছু ‘পার্কিং জোন’ তৈরি করা হবে। যান নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
তবু কি চিঁড়ে ভিজবে? প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই। কারণ, শহরে পার্কিংয়ের জায়গা এমনিতেই বাড়ন্ত। রাস্তার ধারে যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। গত এক বছরে শহরে অটোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে টোটো, যার অধিকাংশই অবৈধ বলে অভিযোগ। প্রশাসনেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, মেদিনীপুর শহর এবং লাগায়ো এলাকায় আগে থেকেই অন্তত ৩০০টি অটো চলত। বছর খানেক আগে নতুন করে আরও প্রায় ২০০টি অটো পথে নামে। জেলায় প্রায় ৮২৫টি অটোর রুট পারমিট রয়েছে। এর মধ্যে মেদিনীপুরে সদরে প্রায় ৫০০টি ও খড়্গপুরে প্রায় ১৮০টি অটো রয়েছে। বাকি অটো ঝাড়গ্রাম এবং ঘাটালের। এর পাশাপাশি, পরিবহণ দফতর থেকে মেদিনীপুর শহরে প্রায় ৩০০টি টোটোকে ছাড়়পত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে পারমিট নেয় প্রায় ২০০টি। অথচ, এখন মেদিনীপুরে টোটো চলছে অন্তত ৮০০! যার অধিকাংশের না আছে নির্দিষ্ট রুট, না আছে পারমিট!
এত বিপুল সংখ্যক টোটো চলাচল নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গোলমালও হচ্ছে প্রায়ই। জেলার এক পরিবহণ কর্তার কথায়, “মেদিনীপুর শহরে অবৈধ টোটোর সংখ্যা বেড়েছে। কিছু অবৈধ অটোও রয়েছে। এ বার অবৈধ এই সব গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে।”
পুলিশ এবং পরিবহণ দফতর পুজোয় যানজট এড়াতে দাওযাই দিলেও ভুক্তভোগীরা শঙ্কায় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মেদিনীপুরের বাসিন্দা শুভজিৎ দাস বা খড়্গপুরের শুভশ্রী পালরা বলেন, ‘‘এখন তো বিভিন্ন এলাকায় যানজট রোজকার ঘটনা। এর জন্য মূলত বেআইনি অটো-টোটোই দায়ী। পুজোয় শহর কতটা সচল থাকে সেটাই দেখার।”
দুই শহরেই অনেকগুলি বড় পুজো হয়। পুজোর সময় বাইরে থেকে আরও অনেক অটো-টোটো শহরে ঢোকার সম্ভাবনাও রয়েছে। তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে শহরবাসীর আশঙ্কা।