—ফাইল চিত্র।
বছর গড়ালেও পাল্টায়নি পরিস্থিতি। অভিযোগ, ডেঙ্গি-আক্রান্তকে ভর্তি নিয়ে কোথাও কোথাও উপর মহল থেকে ‘বিশেষ’ নির্দেশ আসছে, কোথাও বা জারি হয়েছে ‘মুখ বন্ধ রাখা’র ফরমান। তাই এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে ফের সরব হয়েছে চিকিৎসক শিবির।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম (ডব্লিউবিডিএফ), অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স (এএইচএসডি)-সহ চিকিৎসকদের পাঁচটি সংগঠন ১৩ সেপ্টেম্বর শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেছে। সেখানে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য গোপনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা হবে।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে ‘অজানা’ জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। মারা গিয়েছেন পাঁচ জন। চার জনের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়। সরকারি হিসেবে গত বছর ডেঙ্গিতে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। ‘অজানা’ জ্বরে মৃত্যুর হিসেব নেই। যদিও বেসরকারি হিসেব বলছে, ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছিল কমবেশি ৮০ জনের।
কেন্দ্র এ বারও রাজ্যের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করার অভিযোগ তুলছে। কারণ, রাজ্য ২০১৮ সালের জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামে পাঠায়নি। সরকারি চিকিৎসকদের অভিযোগ, ডেঙ্গিরোগীকে ভর্তির পরিবর্তে ওষুধ দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার মৌখিক নির্দেশও জারি হয়েছে এবার।
ডাক্তার সংগঠন ডব্লিউবিডিএফের নেতা রেজাউল করিম বলেন, ‘‘ডেঙ্গি-আক্রান্তের তথ্য নিয়ে ধোঁয়াশা থাকছে। তাই শাসক ও বিরোধী সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের ব্যবস্থা হচ্ছে।’’ হেল্থ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা চিকিৎসক হীরালাল কোনারের বক্তব্য, ডেঙ্গির মোকাবিলায় এখানে-ওখানে পোস্টার টাঙানোই যথেষ্ট নয়।
চিকিৎসকেরা জানান, অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গি-আক্রান্তের ভর্তির সংখ্যা বাড়ে। মৃত্যুহার বাড়ে সেপ্টেম্বরে। গত বছর জ্বরের সঙ্গে পেটে-বুকে জল জমা এবং ডায়েরিয়ার মতো উপসর্গও দেখা গিয়েছিল। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ডায়েরিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলেও সরকারি স্তরে ঘোষণা করা হয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানান, ডেঙ্গির ভাইরাস দেহে জটিল প্রভাব ফেললে এই ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। তাই গোপন করার পরিবর্তে সতর্ক করা জরুরি। ডেঙ্গির মতো রোগ সম্পর্কে তথ্য গোপন সমস্যা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন এএইচএসডি-র সম্পাদক মানস গুমটা।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সম্প্রতি দাবি করেন, সচেতনতা প্রসারের দিক থেকে রাজ্য ডেঙ্গি-মুক্ত হওয়ার পথে। সেই প্রসঙ্গ টেনে মানসবাবু বলেন, ‘‘সরকার নিশ্চয় ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে না। কিন্তু রাজ্য ডেঙ্গি-মুক্ত হতে চলেছে, এই ধরনের ঘোষণাও বিপজ্জনক।’’