(বাঁ দিকে) মহম্মদ সেলিম। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তাঁর টুইটের শব্দচয়ন নিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচনা শুরু হয়েছিল। সোমবার থেকে শুরু-হওয়া সেই বিতর্ক বুধবার আইনি মোড় নেয়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে আইনি নোটিস পাঠান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত তিনি কোনও আইনি নোটিস পাননি বলে দাবি করেছেন সেলিম। আনন্দবাজার অনলাইনকে ওই সময়ে সেলিম বলেন, ‘‘আমি এখনও কিছু হাতে পাইনি। অপেক্ষা করছি কখন আসে!’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক আরও বলেন, ‘‘২০১৩ সালে ওঁর (অভিষেকের) লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সম্পর্কেও আমি প্রশ্ন তুলেছিলাম। সংসদেও বলেছিলাম। তার পরে আমায় একটা ২২৫ পাতার উকিলের চিঠি পাঠানো হয়েছিল । আমি বলেছিলাম, ওই চিঠি আমার কাছে টয়লেট পেপারের মতো।’’ সেলিমের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, উনি এ বারেও অভিষেকের আইনজীবীর চিঠিকে ততটা গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। তিনি ওই আইনি নোটিস নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত নন। প্রসঙ্গত, আইনি নোটিসে অভিষেকের আইনজীবী লিখেছেন, সেলিমের টুইটে তাঁর মক্কেলকে অসম্মান করা হয়েছে। সেই টুইট মুছে সিপিএম রাজ্য সম্পাদককে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ করা হবে।
সেলিম তাঁর সোমবারের টুইটে লিখেছিলেন, ‘‘অভিযোগ, তিনি (অভিষেক) তাঁর অসাধু সম্পদ রাখার করার জন্য ১৫ জন বিদেশি পতিতার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছিলেন।’’ গোল বাধে ওই ‘পতিতা’ শব্দটি নিয়ে। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক তথা সিপিএম রাজ্য কমিটিতে সেলিমের সতীর্থ কনীনিকা ঘোষ বোস বলেন, ‘‘আমরা প্রস্টিটিউট (পতিতা) শব্দটা বলি না। আমরা সেক্স ওয়ার্কার (যৌনকর্মী) বলি।’’ সেলিম ইংরেজি টুইটে ‘প্রস্টিটিউট’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। একই কথা বলেছিলেন সিটু নেতা অনাদি সাহুও।
সেলিমকে বিঁধতে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও ময়দানে নেমেছিলেন। সোমবারের টুইট নিয়ে সেলিম দুঃখপ্রকাশ করেননি। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে ফেসবুক পোস্টে টুইটের ‘ভুল’ কৌশলে শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেন সেলিম। ফেসবুকে একটি পোস্টার পোস্ট করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তাতে লেখেন, “১৫ জন বিদেশি যৌনকর্মীর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাচারে অভিযুক্ত।” অর্থাৎ, ‘পতিতা’ নয়, ‘যৌনকর্মী’। তাতেও অবশ্য ক্ষোভের আগুন নেভেনি। বুধবার মোমিনপুরে সেলিমের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান খিদিরপুর এলাকার যৌনকর্মীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘পতিতা’ শব্দে তাঁদের অসম্মান করা হয়েছে। তাই সেলিমকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। বৃহস্পতিবার সেলিম সে সব প্রসঙ্গের অবতারণা করেননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘আসলে আমি অপরাধের আন্তর্জাতিক চক্রের কথা বলেছিলাম। তাই নজর ঘোরাতে বিষয়টির স্থানীয়করণ করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ এখন দেখার সেলিম কখন আইনি নোটিস হাতে পান। তার পর তিনি কী করেন।