ফাইল চিত্র।
তারা সুন্দরবনের নিছক সৌন্দর্য নয়। ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন, কলকাতা-সহ বঙ্গের সমুদ্রোপকূলের প্রাকৃতিক রক্ষী। এবং শুধু ম্যানগ্রোভই যে আয়লা বা ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সুন্দরবনবাসীকে বাঁচাতে পারে, এ বার হাতে হাতে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গত বছর আমপানের পরে সুন্দরবনের গোসাবা, নামখানা, সাগর, বাসন্তী, পাথরপ্রতিমা, মথুরাপুর, কাকদ্বীপ, কুলতলি ও ক্যানিং ১-২ ব্লকে প্রায় পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ চারা পোঁতা হয়েছিল। ইয়াসের পরে ওই সব এলাকায় ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণের সময় একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ধরা পড়েছে।
জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, সাগর ও নদী সংলগ্ন এলাকায় যে-সব ম্যানগ্রোভ চারা পোঁতা হয়েছিল, তার অধিকাংশই লকলকিয়ে উঠেছে। এমনকি মাত্র আট থেকে ন’মাস বয়সি গাছগুলিও প্রবল ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কা সামলে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আশপাশের এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও ম্যানগ্রোভ এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি কম। প্রবল ঝড়েও ম্যানগ্রোভের গায়ে আঘাতের চিহ্ন নেই। সেখানে মাটি ভাঙার দৃশ্যও খুঁজে পায়নি ড্রোন-ক্যামেরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আমপানের পরে ম্যানগ্রোভের তেমন পরিচর্যা বা নজরদারি হয়নি। সাগর ও নদী সংলগ্ন এলাকায় ম্যানগ্রোভের ঝাড় কেটে কোথাও বসতি গড়ে উঠেছে। অনেক জায়গায় ম্যানগ্রোভের জঙ্গল কেটে তৈরি করা হয়েছে মেছো ভেড়ি। যা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে জানাচ্ছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। এত কিছুর পরেও প্রায় সাড়ে তিন কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেটা ধরা পড়েছে ড্রোন-ক্যামেরায়। এই ছবি দেখার পরে জেলা প্রশাসনের কর্তারা গোটা সুন্দরবনের সাগর ও নদী সংলগ্ন এলাকা ম্যানগ্রোভ দিয়ে ঘিরতে নতুন পরিকল্পনা করেছেন। নতুন করে ম্যানগ্রোভের চারা পোঁতার ব্যবস্থা করছে সেচ দফতর ও জেলা প্রশাসন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন জানাচ্ছেন, শুধু ম্যানগ্রোভের চারা পুঁতলেই হবে না। সারা বছর নদী ও সাগর সংলগ্ন এলাকায় গুরুত্ব দিয়ে ম্যানগ্রোভের পরিচর্যা করতে হবে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘এ বার সাগর ও নদী সংলগ্ন এলাকায় বাঁধের কাছে শুধু ম্যানগ্রোভ চারা পুঁতে দিয়ে দায় সারা হবে না। প্রয়োজনে ওই সব এলাকার বসতি সরিয়ে দেওয়া হবে। বন্ধ করা হবে অবৈধ ভেড়ি। ড্রোন-ক্যামেরার ছবি দেখেই ম্যানগ্রোভের চারা রোপণের জায়গা বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। সাগর ও নদীবাঁধ এলাকাযর কোথায় কত ম্যানগ্রোভের চারা পোঁতা হবে, তা নির্দিষ্ট করার কাজ চলছে।’’
জেলা প্রশাসনের সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিটি ব্লকে ম্যানগ্রোভ পরিচর্যার জন্য লঞ্চের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চারা পোঁতার পরে সারা বছর ওই সব ম্যানগ্রোভ পর্যবেক্ষণ করা হবে। ম্যানগ্রোভ নিধন করে মেছো ভেড়ি বা বসতি যাতে কোনও ভাবেই গড়ে উঠতে না-পারে, সে-দিকে কড়া নজর রাখা হবে। কোনও ভাবে ম্যানগ্রোভ নষ্ট করা হলে কড়া আইনি পদক্ষেপের পথ থেকে প্রশাসন পিছু হটবে না বলেও জানিয়েছেন জেলাশাসক।