একান্তে। পাহাড়ে রওনা হওয়ার আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
পাহাড়ে আন্দোলন করা নিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতাদের মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা, ‘আগুন জ্বালাবেন না’।
সমতলে উন্নয়ন নিয়ে বিরোধীদের নানা অভিযোগের জবাবে কাজের খতিয়ান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘আমরাই পারি’।
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির শালুগাড়া লাগোয়া বেঙ্গল সাফারি পার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে এই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের নির্যাস। এ দিনের সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন পাহাড়-সমতলে উন্নয়নের কাজকে সামনে রেখেই মূলত বিধানসভা ভোটের প্রচার চালাবে তাঁর দল। সেই সঙ্গে আন্দোলনের নামে কোথাও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হলে তিনি যে কঠোর অবস্থান নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবেন না, তা-ও বুঝিয়েছেন। অতীতে মোর্চার আন্দোলনে তাগদা, জয়ন্তী, রাজাভাতখাওয়ার বন বাংলো পুড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি বাংলোই নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কোথাও কোনও সমস্যা হলে আমাকে বলুন। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবেন না। জয়ন্তী পুড়িয়ে দিয়েছিল, রাজাভাতখাওয়া পুড়িয়ে দিয়েছিল। কী চেহারা হয়েছিল। এ সব মানা হবে না।’’
শালুগাড়ার অনুষ্ঠানমঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অন্য অতিথিরা। ছবি: সন্দীপ পাল।
মুখ্যমন্ত্রীর এ বারের পাহাড় সফরের শুরুতে শিলিগুড়িতে সাফারি পার্কের উদ্বোধনের পরে, শেষ দিন আগামী সোমবার শিলিগুড়ি থেকে ফের সাইকেল বিলির কর্মসূচি রয়েছে। মাঝের দিনগুলিতে পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক কর্মসূচি রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের দু’দিন আগে থেকেই শিলিগুড়িতে ‘ক্যাম্প’ করে ছিলেন রাজ্যের যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এ বারের মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে শিলিগুড়িতে দলের ‘ফাইনাল ম্যাচে’র প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছেন তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতারা। সাফারি পার্কের সভামঞ্চ থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর মুখে বারবার শিলিগুড়ির উন্নয়নের কথা শোনা গিয়েছে। সাফারি পার্ককে শিলিগুড়ির মুকুটে আরও একটি ‘পালক’ বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরপূর্ব ভারতের গেটওয়ে হিসেবে শিলিগুড়ি পরিচিতি দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে তৈরির প্রসঙ্গ এনেছেন। নেপাল-বাংলাদেশ-ভূটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগের এই হাইওয়ে তৈরি হলে শিলিগুড়িতে শিল্প-ব্যবসা বাড়বে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা করেছেন। সম্প্রতি বেঙ্গল চেম্বার অব কর্মাস শিলিগুড়িতে তাঁদের অফিস তৈরি করেছে। সে কারণে তাঁদের মঞ্চ থেকে ধন্যবাদও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন বণিকসভার কর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে শিলিগুড়িতে পাঠাবেন বলেও মঞ্চ থেকে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শিলিগুড়ি যে মুখ্যমন্ত্রীর ‘পাখির চোখ’ তা বক্তব্যে বারবার বুঝিয়েও দিয়েছেন। বিরোধীদের ‘শিলিগুড়ি মডেলে’র প্রবক্তা হিসেবে অশোক ভট্টাচার্য একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরকন্যার পাশে সরকারি অতিথিনিবাস তৈরি করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন অশোকবাবুরা। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার উত্তরকন্যা এবং অতিথিনিবাসের প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে বলেছে এগুলি কেন করেছি। শিলিগুড়িতে দেশ বিদেশের অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বরা আসেন, কোনও ভাল সরকারি অতিথিনিবাস ছিল না। আমরা সরকারি অতিথি নিবাস করেছি। উত্তরকন্যা করেছি। মানুষের উপকার হয়েছে।’’ এরপরেই বিরোধীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘আগে তো কেউ এ সব করেনি। কেন করেননি। কেউ তো বারণ করেনি। আমরা করে প্রমাণ করেছি, যা বলি তা করতে পারি।’’ রাজ্যের ছ’টি ‘থিম সিটি’র মধ্যে শিলিগুড়িও যে রয়েছে, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উত্তর পূর্ব ভারতের গেটওয়ে হোক বা বা শিল্পের বিকাশ, সচিবালয় উত্তরকন্যা হোক বা হ্যাচারি শিল্প, মুখ্যমন্ত্রী সতেরো মিনিটের কিছু বেশি সময়ের বক্তৃতায় বারবারই ঘুরে এসেছে শিলিগুড়ির প্রসঙ্গ। যা শুনে সভায় উপস্থিত এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই মুখ্যমন্ত্রী ফাইনাল ম্যাচ জিততে চাইছেন।’’