দিল্লিতে কংগ্রেসের ডাকা বিরোধী-বৈঠকে যোগ না দেওয়ার কথা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
আবহ মোটামুটি তৈরি ছিল। বাম ও কংগ্রেসের ডাকা ধর্মঘটে এ রাজ্যে বুধবার বিভিন্ন অশান্তির পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দুই দলের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নেন। তৃণমূল সূত্রে আভাস মিলছিল, দিল্লিতে ১৩ জানুয়ারি বিজেপি বিরোধী নেতাদের বৈঠকে বিষয়টির প্রতিফলন ঘটবে। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার মমতা নিজেই জানিয়ে দেন, তিনি ওই বৈঠকে যাবেন না। এ দিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘কংগ্রেস এবং সিপিএম এখানে যে ভাবে গুন্ডামি করছে, তাতে আমি ১৩ তারিখের দিল্লির বৈঠকে আর যাব না বলে ঠিক করেছি। মাফ করবেন।’’ এ রাজ্যে তিনি একাই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবেন বলেও মমতা এ দিন দাবি করেন।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র বিরোধিতা-সহ নানা দাবিতে বাম ও কংগ্রেসের ডাকা বুধবারের দেশজোড়া ধর্মঘটে এ রাজ্যে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ধর্মঘট সমর্থকদের বিরুদ্ধে পুলিশও ‘রণং দেহি’ ভূমিকায় নামে। সব মিলিয়ে বিষয়টি প্রশাসন এবং শাসক দলের পক্ষে অস্বস্তিজনক হয়ে ওঠে। মমতা গোড়া থেকেই বলেছিলেন, নীতিগত ভাবে ধর্মঘটের কারণগুলি নিয়ে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু এ রাজ্যে বন্ধের বন্ধ্যা রাজনীতি তিনি মানবেন না। সেখান থেকেই বিরোধ বেড়ে যায়। সিপিএম এবং কংগ্রেস মমতাকে পাল্টা খোঁচা দিয়ে বলে, তিনি কেন্দ্রের বিজেপি শাসকদের চোখে ‘ভাল থেকে’ বার্তা দিলেন। এই পরিস্থিতিতে মমতার দিল্লির বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিষয়টিকে গুরুতর মাত্রা দিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
দিল্লিতে যে বৈঠক হতে চলেছে, তার সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল মমতার হাতেই। তিনিই প্রথম সনিয়া গাঁধী, শরদ পওয়ার-সহ সব শীর্ষ স্থানীয় বিরোধী নেতাকে চিঠি লিখে সিএএ, এনআরসি-র বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। নেতারা সকলেই তাতে সায় দেন। এর পরে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়ার ডাকে ১৩ জানুয়ারি, সোমবার বৈঠকের দিন স্থির হয়।
আরও পড়ুন: বোমা-শিল্প চলছে, বিরোধী তোপে রাজ্য
ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে বুধবার থেকেই এ রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়েইছিল। তার পরে এ দিন বিধানসভায় সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে বাম এবং কংগ্রেস প্রস্তাব আনতে চাইলে তাতে শাসক তৃণমূল বাধা দেয়। এই প্রসঙ্গে বিধানসভায় বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই এ দিন বাম-কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠক বয়কটের কারণ জানাতে গিয়ে এ দিন বিধানসভায় কংগ্রেস ও সিপিএম সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘‘এখানে এক রকম, দিল্লিতে আর এক রকম রাজনীতি করছে ওরা। এটা চলতে পারে না। আমিই প্রথম বিভিন্ন দলকে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে বৈঠক করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু আমি এখন আর ওই বৈঠকে যাচ্ছি না। রাজ্যে কংগ্রেস, সিপিএমের গুন্ডামি বরদাস্ত করব না। আপনাদের সঙ্গে আমি আর নেই। এ রাজ্যে আমি একাই এনআরসি, সিএএ-র বিরুদ্ধে লড়াই করব।
আরও পড়ুন: বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়করণে বেপরোয়া মনোভাবই কি ডেকে আনছে বিপদ?
কংগ্রেস হাইকম্যান্ড অবশ্য এখনও আশাবাদী। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে তাঁকে বৈঠকে আসার জন্য বোঝানো হবে। কংগ্রেস নেতৃত্বের ধারণা আপাত ভাবে বামেদের সঙ্গে রাখা নিয়েই হয়তো মমতার মূল আপত্তি। তবে এ দিন কংগ্রেস দফতরে জয়রাম রমেশ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আশা করি, মমতা আসবেন।’’
রাজ্যে সিপিএম এবং কংগ্রেস উভয়েই অবশ্য মমতার দিল্লির বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্তকে তীব্র সমালোচনা করেছে। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চাননি, তবু এখানে ধর্মঘট হয়েছে। তাই ওঁর রাগ হয়েছে। বাচ্চাদের মতো সব উল্টে দিয়ে বলছেন, আর খেলব না। আসলে তিনি এমন কিছু করতে চান না, যাতে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের রাগ হয়। শাহ সিবিআই-ইডিকে সক্রিয় করে তোলেন।’’ একই সুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস-বামেদের ডাকে বন্ধ সফল হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী হতাশ। আসল কথা নরেন্দ্র মোদীকে বার্তা দেওয়া যে, কংগ্রেস সভানেত্রীর সভায় তিনি থাকবেন না। কংগ্রেসের নেতৃত্বে কোনও আন্দোলনেই তিনি থাকবেন না, এটাই তো বিজেপি চায়।’’