মদনের জামিন খারিজে আজ হাইকোর্টে সিবিআই

হাইকোর্ট বন্ধ। সঙ্গে লোকাভাব। এই অবস্থায় মদন মিত্রের জামিন খারিজের আবেদন জানিয়ে আজ, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে মামলা দায়ের করতে চলেছে সিবিআই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৪২
Share:

নেতার জামিনের আনন্দে পোস্টার টাঙাচ্ছেন সমর্থকেরা। ভবানীপুরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

হাইকোর্ট বন্ধ। সঙ্গে লোকাভাব। এই অবস্থায় মদন মিত্রের জামিন খারিজের আবেদন জানিয়ে আজ, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে মামলা দায়ের করতে চলেছে সিবিআই।

Advertisement

দশ মাসেরও বেশি জেল হেফাজতে থাকার পরে গত ৩১ অক্টোবর আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক পার্থপ্রতিম দাস ২ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেন সারদা কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রকে। আলিপুর আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই আজ হাইকোর্টের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চে যাচ্ছে সিবিআই।

শুধু মদন মিত্রকে নিয়ে নয়। সারদা-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত তথা রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি রজত মজুমদারের জামিন খারিজ করার জন্যও সক্রিয় হয়েছে সিবিআই। এ দিনই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। তার পরেই শীর্ষ আদালতের তরফে রজতবাবুকে নোটিস পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

রবিবার সিবিআইয়ের আইনজীবী কে রাঘবচারিলু জানিয়েছিলেন, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা। সোমবার সকালেই দিল্লি থেকে বিমানে কলকাতায় আসেন রাঘবচারিলু। প্রথমে সিজিও কমপ্লেক্সে যান তিনি। সেখান থেকে সিবিআইয়ের এসপি উপেন্দ্র অগ্রবালকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল তিনটে নাগাদ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সুগত মজুমদারের কার্যালয়ে পৌঁছন।

হাইকোর্ট সূত্রের খবর, রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে সিবিআই-কর্তাদের তরফে জানানো হয়, তাঁরা একটি মামলা দায়ের করতে চান। সিবিআই-কর্তাদের রেজিস্ট্রার জেনারেল জানান, এখন হাইকোর্ট বন্ধ। কর্মী না থাকায় এ দিন মামলা নথিভুক্ত করা সম্ভব নয়। মঙ্গলবার অবকাশকালীন আদালত বসবে। প্রয়োজন হলে সিবিআই ওই আদালতের অনুমতি নিয়ে মামলা দাখিল করতে পারে।

সিবিআই সূত্রের খবর, আজ সকাল সাড়ে দশটায় হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি ঈশানচন্দ্র দাসের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করার অনুমতি চাইবেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। বেঞ্চ অনুমতি দিলে মামলা দাখিল করা হবে। তার পরেই বেঞ্চ সিদ্ধান্ত নেবে, মামলার শুনানি আজই হবে কি না।

এ দিনই আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতে মদনবাবুর আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় ও নিলাদ্রি ভট্টাচার্য আবেদন জানিয়ে বলেন, আদালত তাঁদের মক্কেলকে জামিন দেওয়ার সময়

শর্ত দিয়েছিল, সিবিআইয়ের কাছে পাসপোর্ট জমা রাখতে। সেই মতো রবিবার মদনবাবুর আইনজীবীরা সিবিআইয়ের কার্যালয়ে পাসপোর্ট জমা দিতে যান। কিন্তু সিবিআই জানায়, যাঁর পাসপোর্ট তাঁকেই যেতে হবে জমা দেওয়ার জন্য। এ দিন মদনবাবুর আইনজীবী আলিপুরের অবকাশকালীন আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিষ্ট্রেট বিনয় নুইয়ার কাছে ওই পাসপোর্ট জমা দেওয়ার আর্জি জানালেও আদালত তা গ্রহণ করেনি। একপক্ষের বক্তব্য শুনে কোনও নির্দেশ দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন বিচারক। আগামী ৬ নভেম্বর সিবিআইয়ের আইনজীবী ও তদন্তকারী অফিসারদের উপস্থিতিতে ওই আবেদনের শুনানি হবে।

আদালত এ কথা জানানোর পরে মদনবাবু সিদ্ধান্ত নেন, তিনি প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে সিজিও কমপ্লেক্সে গিয়ে পাসপোর্ট জমা দিয়ে আসবেন। জামিনের পরে যে অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে তিনি ভবানীপুরের বাড়িতে ফিরেছিলেন, এ দিন বিকেলে সেই অ্যাম্বুল্যান্সটিকে মদনবাবুর বাড়ির সামনে নিয়েও আসা হয়। কিন্তু তাঁর পরিবারের লোকজন ঠিক করেন, অসুস্থ অবস্থায় মদনবাবুর সিজিও কমপ্লেক্সে যাওয়া উচিত হবে না। ঘটনাচক্রে এ দিন রাত থেকেই মদনবাবু আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে তাঁর পারিবারিক
সূত্রে জানা গিয়েছে। মন্ত্রীর শ্বাসকষ্ট কিছুটা বেড়েছে। পরিস্থিতি বুঝলে তাঁকে ফের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হতে পারে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে।

ওই পাসপোর্ট জমা দিতে অসুস্থ মদনবাবুর বদলে তাঁর বড় ছেলে স্বরূপ বাবার আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে যান। কিন্তু মামলার তদন্তকারী অফিসার এ দিন না থাকায় তাঁরা পাসপোর্ট জমা দিতে পারেননি। মদনবাবুর আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্য জানান, আজ, মঙ্গলবারও তাঁরা ফের সিবিআইয়ের কার্যালয়ে যাবেন পাসপোর্ট জমা দিতে। আইনজীবীর দাবি, যাঁর পাসপোর্ট, তাঁকে নিজেকে গিয়ে জমা দিতে হবে, আইনে এমন কথা বলা নেই।

মদনবাবুর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবারও যদি সিবিআই পাসপোর্ট জমা না নেয়, তা হলে আলিপুর আদালত ৬ নভেম্বর পাসপোর্ট জমা দেওয়ার ব্যাপারে যে নির্দেশ দেবে, সেই মতো চলবেন তাঁরা। সোমবার মন্ত্রীকে দেখতে তাঁর বাড়িতে যান তৃণমূলের শ্রমিক নেতা তথা বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং মন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক রণজয় চক্রবর্তী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement