চিতাবাঘ টেনে নিয়ে গেল বালককে

মোটা চালের ভাত আর তার মাঝেই কোন্দ আলুর এক দলা তরকারি— রোজ দুপুরে, বাবার জন্য খাবারটা সেই নিয়ে যেত।

Advertisement

নারায়ণ দে

কালচিনি (আলিপুরদুয়ার) শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪২
Share:

চিতাবাঘের হানায় মৃত বালকের মা। ছবি: নারায়ণ দে।

মোটা চালের ভাত আর তার মাঝেই কোন্দ আলুর এক দলা তরকারি— রোজ দুপুরে, বাবার জন্য খাবারটা সেই নিয়ে যেত।

Advertisement

শনিবার, তোবড়ানো একটা এনামেলের ডিব্বায় সেই খাবার নিয়েই রওনা দিয়েছিল বছর দশেকের উমেশ মুণ্ডা। তবে, বাবার কাছে আর পৌঁছনো হয়নি তার। কালচিনি চা বাগানটা মাঝ বরাবর হেঁটে পার হওয়ার সময়ে আচমকা তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে একটা চিতাবাঘ। উমেশের সঙ্গেই ছিল তারই দুই সঙ্গী, নিতান্তই বালক।
ভয় পেয়ে তারা লুকিয়ে পড়েছিল পাশের নালায়।

খানিক পরে, এক ছুটে বাড়ি এসে তারাই খবর দিয়েছিল, ‘‘উমেশরে বাঘে ধরেছে!’’ খবর পেয়েই বাগানে ছুটে এসেছিলেন কুলি লাইনের লোকজন। বন্দুক নিয়ে এসেছিল বনকর্মীরাও। মিনিট কয়েকের খোঁজুখুঁজির পরেই পাওয়া গিয়েছিল উমেশের ছিন্ন দেহ। যার নিম্নাংশের অনেকটাই ততক্ষণে খুবলে খেয়েছে ওই শ্বাপদ।

Advertisement

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর উজ্জ্বল ঘোষ বলছেন, ‘‘উত্তাখণ্ডের পিথরগড়ের মানুষখেকো চিতাবাঘের পরে এমনটা আর শুনিনি। চিতাবাঘ আক্রমণ করে বসে ঠিকই, তবে মানুষখেকো হয়ে ওঠার নজির তেমন নেই।’’ চিন্তাটা সেখানেই। বনকর্মীরা তাই খাঁচা বসিয়েছেন কালচিনির ওই বাগানে। টোপ দিয়ে চিতাবাঘটিকে ধরার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে।

বক্সার ডিমার জঙ্গল ছুঁয়েই রাজাভাতখাওয়া চা বাগান। সেখানেই কুলি লাইনের বাসিন্দা প্রীতম মুণ্ডাকে রোজ দুপুরে খাবার পৌঁছে দিত ছেলে উমেশ। খরিশ গাছের ছাওয়ায় ছেলের জন্য দুপুর হলেই অপেক্ষা করত প্রীতমও। এ দিন সেই অপেক্ষা দীর্ঘ হতে থাকায় এক সময়ে বিরক্ত হয়েই মাঠে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর এখন আক্ষেপ, ‘‘মাঠে ফিরে না গিয়ে একটু এগিয়ে খোঁজ নিলে
ছেলেটা হয়তো বেঁচেও যেত!’’

বাগান ভেঙে অতটা রাস্তা একা যেতে ভাল লাগে না বলে উমেশ তার বন্ধুদের নিয়েই বাগান ফুঁড়ে চলাচল করত। এ দিনও তার সঙ্গে ছিল লাল আর মুকের, দুই বন্ধু। তারা বলছে, ‘‘আগে আগে হাঁটছিল উমেশ। হঠাৎই ঝোঁপ থেকে চিতাবাঘটা ঝাঁপিয়ে পড়ল উমেশের উপরে। মাটিতে পড়ে যেতেই ওর ঘাড় কামড়ে ঝোপে টেনে নিয়ে গেল চিতাবাঘটা।’’

এ দিন বিকেলে কুলি লাইনে গিয়ে দেখা গেল, ছেলেকে বাঘে খেয়েছে শুনে ঘন ঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন উমেশের মা মিনু। দু’হাঁটুর মাঝে মাথা গুঁজে ঠায় বসে আছেন প্রীতমও। মাঝে মাঝে আক্ষেপে মাথা ঝাঁকাচ্ছেন— ‘‘কেন আমি এগিয়ে গিয়ে দেখলাম না একটু বলুন তো!’’

প্রীতমের পড়শি ক্রান্তি লোহার, সীমা লামারা বলছেন, ‘‘চিতাবাঘ আমাদের ছাগল-কুকুর নিত্য টেনে নিয়ে যায়। তা বলে মানুষ? এখন তো দিনে দুপুরে বাড়ি থেকে বেরোতেই ভরসা পাচ্ছি না।’’

আতঙ্কের ছায়া আশপাশের চা বাগানেও। পিথরগড় কি ফিরে এল কালচিনিতে? প্রশ্ন সেটাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement