প্রতীকী ছবি।
বছর দশেক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এক নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল, রেলের প্রকল্পে জমিদাতাদের রেলে চাকরি দেওয়া হবে। চলতি মাসে সেই নীতি-নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ রেলের কোনও প্রকল্পে জমি চলে গেলেও জমিদাতারা আর সরকারি চাকরি পাবেন না। রেল বোর্ডের তরফে সব জ়োনে পাঠানো এক নির্দেশিকায় এই নতুন ব্যবস্থার কথা জানানো হয়েছে।
২০১৩ সালের জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের অধিকার সংক্রান্ত আইনের দ্বিতীয় তফসিলের চার নম্বর অনুচ্ছেদ খতিয়ে দেখে রেল মন্ত্রক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। জমি-মালিক বা তাঁর পরিবারের কাউকে চাকরি না-দিলেও ক্ষতিপূরণের বন্দোবস্ত থাকছে। নিজেদের কোনও প্রকল্প রূপায়ণে রেল কারও জমি অধিগ্রহণ করলে এ বার সেই জমির উপরে নির্ভরশীল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ বাবদ এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা দেবে। অধিগৃহীত জমির মালিকানা একাধিক জনের হলে ক্ষতিপূরণের টাকা আনুপাতিক হারে সকলের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে।
কিন্তু চাকরি দেওয়ার নিয়মনীতি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন?
রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, জমির বদলে চাকরি দেওয়ার নীতি মেনে চলার বাধ্যতা থাকায় সারা দেশেই বহু প্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে। জমিদাতাদের বিরোধিতায় অনেক ক্ষেত্রেই জমি অধিগ্রহণের কাজ এগোয়নি। এমনকি প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ হয়ে যাওয়ার পরেও জমি না-মেলায় মাঝপথে কাজ থামিয়ে দিতে হয়েছে। চাকরি দেওয়ার নীতি প্রত্যাহার করার ফলে ওই জটিলতা কাটবে বলে রেলকর্তাদের আশা।
জমি-জটিলতায় আটকেপড়া প্রকল্প আছে পশ্চিমবঙ্গেও। প্রকল্প অনুমোদিত হওয়ার পরেও জমি-জটে ক্যানিং থেকে ঝড়খালির মধ্যে রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ সম্পূর্ণ করা যায়নি। হুগলির ভাবাদিঘিতে আন্দোলনের জন্য তারকেশ্বর থেকে বিষ্ণুপুরের রেলপথের কাজ থমকে গিয়েছে। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে জমিদাতারা রুখে দাঁড়ানোয় হাইস্পিড রেল প্রকল্পের জমি নেওয়ার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে মহারাষ্ট্রে।
প্রশ্ন উঠছে, জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের অধিকার সংক্রান্ত আইনে জমিদাতাদের অধিকার সুরক্ষিত করার কথা বলা হয়েছে। ওই আইনে জনস্বার্থে কোনও প্রকল্পের জন্য সরকার জমি নিলে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি পুনর্বাসনের অধিকারও দেওয়া হয়েছে জমিদাতাদের। তা হলে নতুন নির্দেশিকায় পুনর্বাসন হিসেবে রেলে সরকারি চাকরি দেওয়ার নীতি রদ করা হল কী ভাবে?
‘‘রেলের জমি অধিগ্রহণ আইনের সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের অধিকার সংক্রান্ত আইনের কোনও বিরোধ নেই,’’ বলছেন এক রেলকর্তা।