ধর্মতলায় বিজেপি সভার জন্য যানজট শহরের, দুর্ভোগ পথ চলতি মানুষের। বুধবার শিয়ালদহে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
শহরের কেন্দ্রস্থলে বিজেপির সভা ঘিরে শহর অচল হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন অনেকেই। যানজটের ফাঁসে আটকে দীর্ঘ ভোগান্তির ভয়ও ছিল। অন্য দিকে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের তরফেও ছিল বিশাল আয়োজন। তবে সে ভাবে যানজট হয়নি শহরের বেশির ভাগ অংশে। শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় সভামুখী মিছিলের ফাঁসে আটকে পড়ে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে শুরু করে স্কুল ফেরত পড়ুয়ারা। যানজটের জেরে বহু রাস্তায় গাড়ির স্বাভাবিক চলাচল বাধা পায়। তবে কিছুটা ভোগান্তির সম্মুখীন হলেও মোটের উপরে শহরের গতি ছিল স্বাভাবিক।
বুধবার শহরের কেন্দ্রস্থলে বিজেপির এই সভা ঘিরে যানজটের আশঙ্কায় আগে থেকেই পুলিশি ব্যবস্থা করেছিল লালবাজার। তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সভার ধাঁচে সকাল সাতটা থেকে রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ নামানো হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ছিলেন সহকারী নগরপাল পদমর্যাদার আধিকারিকেরা। ধর্মতলার পাশাপাশি মেট্রো স্টেশনের বাইরেও বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ধর্মতলার সভার রেশ শহরের বাকি অংশে সে ভাবে চোখে পড়েনি এ দিন। ছোট ছোট মিছিলের জেরে শিয়ালদহ চত্বরে কিছুটা যানজট দেখা গেলেও স্টেশনের ভিতরে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। স্টেশনে ট্রেন ঢুকলে সভামুখী ভিড়ের ছবি কিছুটা চোখে পড়লেও তার রেশ দীর্ঘায়িত হয়নি। একই ছবি ছিল শহরের অন্যত্রও। শ্যামবাজার চত্বরে ভিড় সামলানোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘ভিড় কোথায়?’’
দুপুর ১টা থেকে ধর্মতলায় সভা শুরু হলেও সকাল ১০টার আগে থেকেই ওই অংশে যান নিয়ন্ত্রণ শুরু করে পুলিশ। ধর্মতলা থেকে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউমুখী গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ওই চত্বর বন্ধ থাকায় আশপাশের একাধিক রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়ে। এ দিন শহরে বিজেপির সভা ঘিরে যে কয়েকটি জায়গায় ভোগান্তির ছবি দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর। শহরতলির একাধিক বাস থেকে শুরু করে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বার হওয়া ছোট ছোট মিছিলের জেরে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে বেলার দিকে গাড়ির লাইন চোখে পড়েছে। এমনকি, যানজটের ফাঁসে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়াদের আটকে থাকতেও দেখা গিয়েছে সেখানে। কাঁচরাপাড়া থেকে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসছিলেন বিপ্লব মাইতি। শিয়ালদহ উড়ালপুলে ওঠার আগে জটে আটকে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তিনি মন্তব্য করলেন, ‘‘বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে ভয়ে ভয়ে ছিলাম। শিয়ালদহের কাছে এসে দেখছি গাড়ির লাইন।’’
শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে ভিড়ের আশঙ্কায় সকাল থেকে যান নিয়ন্ত্রণের জেরে ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে গাড়ির দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। ফলে সকালে দূরপাল্লার ট্রেন থেকে নেমে ট্যাক্সি না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। দীর্ঘ সময় তাঁদের অপেক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ। হয়রানি হয় স্কুলফেরত পড়ুয়াদেরও। বহু জায়গায় সকালে স্কুলগাড়িতে করে পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া হলেও ফেরার সময়ে অভিভাবকদের বলা হয়েছিল তাঁদের সন্তানদের নিয়ে আসার জন্য। ফলে, সমস্যায় পড়েন তাঁরা। তবে শ্যামবাজার, উল্টোডাঙা, আলিপুর, রাসবিহারী চত্বরে ভিড়ের রেশ সে ভাবে চোখে পড়েনি। স্বাভাবিক ছবি ছিল মেট্রোতেও।
হাওড়া স্টেশন চত্বরেও ঠাসাঠাসি ভিড়ের ছবির দেখা মেলেনি। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত হাওড়ায় যে দূরপাল্লার ট্রেনগুলি এসেছে, সেগুলি থেকে ছোট কয়েকটি মিছিল করে স্টেশন থেকে বেরোন সভায় যোগ দিতে আসা কর্মী ও সমর্থকেরা। এ ছাড়া, স্টেশন চত্বর ছিল অন্যান্য দিনের মতোই।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেনে করে হাওড়া স্টেশনে আসার কথা ছিল মূলত বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম এবং মেদিনীপুর-সহ অন্যান্য কয়েকটি জেলার কর্মী-সমর্থকদের। এ ছাড়া, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে হাওড়া সেতু থেকে একটি কেন্দ্রীয় মিছিল বেরোবে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কোনও বড় মিছিল হাওড়া সেতু দিয়ে যায়নি। ফলে হাওড়াতেও সভার জন্য দীর্ঘ যানজট হয়নি। লালবাজারের এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘বিক্ষিপ্ত কয়েকটি জায়গায় গাড়ি থমকালেও দীর্ঘ যানজট সে ভাবে হয়নি এ দিন। দক্ষ হাতে পুলিশকর্মীরা সব কিছু সামলেছেন।’’