প্রতীকী ছবি
একাকী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে চালু করা হয়েছিল কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’ প্রকল্প। কিন্তু ওই প্রকল্পের কাজকর্মে সন্তুষ্ট নন লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা।
প্রণামের মাধ্যমে পুলিশ কী ভাবে আরও বেশি করে প্রবীণ নাগরিকদের পাশে দাঁড়াতে পারে, তা নিয়েই এখন ভাবছেন ওই কর্তারা। শহরের সব ক’টি থানা যাতে ওই প্রকল্পে ঠিক মতো কাজ করে, তার জন্য মঙ্গলবার রাতে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বার্তা পাঠিয়েছেন ওসিদের। থানাগুলি সেই কাজ ঠিক মতো করছে কি না, তা নজরে রাখতে বলা হয়েছে ডিসিদের। পুলিশের একটি অংশের আবার দাবি, প্রণামের সদস্যদের দেখভাল করতে গিয়ে তাদের অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই একটু সাবধানে এগোতে হচ্ছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশ এলাকায় প্রণামের বর্তমান সদস্য-সংখ্যা সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি। ওই বয়স্কদের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি কোনও বিপদে তাঁরা যাতে প্রয়োজনীয় সাহায্য পান, তার জন্য প্রতিটি থানার এক জন বা দু’জন করে পুলিশকর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া আছে। তাঁদেরই বছরভর ওই একাকী প্রবীণদের দেখভাল করার কথা। কিন্তু অভিযোগ, প্রবীণেরা অনেক সময়ে পুলিশকে ডেকেও সাহায্য পাচ্ছেন না।
পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের সাফাই, গত কয়েক মাসে করোনার কারণে পরিস্থিতি অনেক বদলে গিয়েছে। তাই দেখভালে খামতি থেকে যাচ্ছে। পুলিশ কমিশনার সেই কারণেই বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে ওসিদের পাঠানো বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘‘প্রণামের কাজকর্ম কেমন চলছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। বেশ কিছু এলাকায় প্রণাম প্রকল্প ঠিক মতো কাজ করছে না বলে খবর আসছে।’’ লালবাজার জানিয়েছে, ওই নির্দেশের সঙ্গে কমিশনার এ-ও বলেছেন, ‘‘এটাও ঠিক যে, প্রণামের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং গৃহ-পর্যবেক্ষণে আছেন। তা-ও ওসিদের অনুরোধ করব যাতে এই কঠিন সময়ে প্রণাম প্রকল্প কাজ করে।’’
প্রণামের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, কমিশনার ডিভিশনের ডিসিদের বিষয়টি তদারক করতে বলেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি থানাতেই এক জন করে আধিকারিক নিযুক্ত আছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রবীণদের দেখভালের জন্য। তাঁদের অধীনে একটি করে তিন সদস্যের দল আছে। তাঁদেরই বিভিন্ন বাড়িতে গেয়ে প্রবীণদের খোঁজখবর নেওয়ার কথা। করোনার কারণে মার্চ মাস থেকে সেই কাজ ঠিক মতো করেননি
তাঁদের অনেকেই। ফোনে খোঁজখবর নেওয়া হলেও পুলিশের তরফে কোনও সাহায্য পাচ্ছেন না বলে অনেকেই অভিযোগ জানিয়েছেন লালবাজারে। সেই সব অভিযোগ পেয়েই অসন্তুষ্ট শীর্ষ কর্তারা।
গত বছর শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা খুন হওয়ায় প্রবীণদের নিরাপত্তায় একগুচ্ছ পদক্ষেপ করা হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে কমিশনারের নির্দেশ পাওয়ার পরেই বুধবার লকডাউনের মধ্যে বেশ কয়েকটি থানা নিজেদের এলাকার প্রণামের সদস্যদের তালিকা বার করে ফোনে তাঁদের খোঁজ নিয়েছে। তাঁদের কারও কোনও সমস্যা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, প্রণামের সদস্য নন, এমন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশ। কমিশনারের নির্দেশ মতো তাঁদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।