বেপরোয়া: এ ভাবেই যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র
বেপরোয়া মোটরবাইক ঠেকাতে তা বাজেয়াপ্ত করতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার তিন দিন পরেই পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এক ধাপ এগিয়ে বলে দিলেন, ‘‘বেপরোয়া বাইককে যে কোনও মূল্যে আটকাতে হবে। দ্রুত গতিতে চালাতে গিয়ে কোনও বাইক দুর্ঘটনা ঘটালে তার দামের সমান জরিমানা আদায় করবে সরকার।’’
গত জুলাইয়ে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। বেপরোয়া বাইক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। কোনও বাইক-আরোহীকেই হেলমেট ছাড়া পেট্রোল দেওয়া হবে না, তাঁর নির্দেশে এই আইনও তৈরি হয়। পুলিশের দাবি, এতে প্রাথমিক সাফল্য মিলেছিল। যদিও গত শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তখনই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে মেরে দেওয়ার পরে ভাববে, কয়েক দিন পরে জেল থেকে বেরিয়ে যাব আর গাড়ির জন্য বিমার টাকা পেয়ে যাব। এঁদের কাছে দুর্ঘটনা এখন জলভাত। এঁদের জন্য আইন কঠোর করতেই হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরেই যে পরিবহণ দফতর আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছে, সোমবার বিধানসভার বাইরে তা জানান পরিবহণমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথা আমার কাছে নির্দেশ। তবে মোটর ভেহিক্লস আইন বেশির ভাগই কেন্দ্রের আওতায়। চাইলেই রাজ্য তা সংশোধন করতে পারে না। তার মধ্যেও কতটা কী করতে পারি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
তবে কঠোর আইন বা জরিমানা করলেই বেপরোয়া বাইক ঠেকানো যাবে কি না, নিশ্চিত নন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আইন এখনও অনেক আছে। কিন্তু তা কী ভাবে বলবৎ হচ্ছে, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। হেলমেট ছাড়া তেল দেব না, এই বিধি প্রথমে যে ভাবে পেট্রোল পাম্পগুলি মেনেছিল, তা সময়ের সঙ্গে শিথিল হয়েছে। ফলে, নিয়ম মেনেও লাভ হচ্ছে না।’’ ওই কর্তা জানান, দিল্লির মতো কিছু জায়গায় ট্র্যাফিক নিয়ম মানার জন্য প্রথমে জরিমানার পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়ায় প্রশাসন। কয়েক মাস পরে গাড়ি নিয়ম মানতে শুরু করলে তা কমানো হয়। একই ভাবে কলকাতায় কিছু দিনের জন্য এমন জরিমানা বাড়ানোর নিয়ম করলে তার ফল মিলতে পারে বলে মত প্রশাসনিক কর্তাদের।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘আসল কথা, মোটরবাইক নিয়ে দাদাগিরি আটকাতেই হবে। কী ভাবে তা করা যায়, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিছু দিনের মধ্যেই কী করা হবে, তা স্পষ্ট হবে।’’