উইনার্স বাহিনী। ফাইল ছবি।
মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা উইনার্স বাহিনীর সদস্যদেরই দেওয়া হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা সামলানোর বাড়তি দায়িত্ব। গত অগস্ট থেকে উইনার্সের ১২ জন সদস্য মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নজরদারির কাজ করলেও আরও কয়েক জন সদস্যকে স্থায়ী ভাবে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এক পদস্থ পুলিশকর্তা জানান, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বাহিনীর কাজে খুশি। তিনি চান, তাঁর বাড়ির সুরক্ষায় এই বাহিনীকে আরও বেশি করে লাগানো হোক। ফলে মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে থাকাকালীন তো বটেই, তিনি রাজ্যের বাইরে থাকলেও কালীঘাটে তাঁর বাড়ি ঘিরে রাতপাহারা দেবে উইনার্স। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, যে বাহিনী তৈরি হয়েছিল প্রধানত রাতপথে মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য, তাদের কাজ কি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পাহারা দেওয়া? পুলিশের শীর্ষ স্তরের বক্তব্য, এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত।
রাজীব কুমার কলকাতার নগরপাল থাকাকালীন, ২০১৮ সালের ১১ জুলাই আত্মপ্রকাশ ঘটে উইনার্স বাহিনীর। মূলত সন্ধ্যায় ও রাতে রাস্তায় মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই এই বাহিনীর সৃষ্টি। বাছাই করা মহিলা পুলিশকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয় ২০১৮-র মার্চ থেকে। মোটরবাইকে সওয়ার এই বাহিনী মার্শাল আর্টের পাশাপাশি আধুনিক সব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারেও সিদ্ধহস্ত। কয়েক জন অফিসারের পাশাপাশি এই মুহূর্তে উইনার্স বাহিনীতে রয়েছেন ৪৭ জন পুলিশকর্মী। গত প্রায় সাড়ে চার বছরে দেড়শোরও বেশি জনকে গ্রেফতার করেছেন বাহিনীর সদস্যেরা।
লালবাজারের দাবি, উইনার্স বাহিনীর দাপটে গত দু’বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা। দেশে সাড়া ফেলে দেওয়া একাধিক ধর্ষণের ঘটনার পরেও এই বাহিনীকে বাড়তি নজরদারি চালাতে দেখা গিয়েছে শহরে। যে সব জায়গা থেকে অতীতে মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের অভিযোগ বেশি আসত, সেখানেই দেখা গিয়েছে এই বাহিনীর বিশেষ তৎপরতা। দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর সময়ে এই বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসা কুড়িয়েছে।
২০২১-এর ২৫ অগস্ট উইনার্সকে মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথের নিরাপত্তার বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়। মূলত কালীঘাট থেকে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর যাতায়াতের পথে রাখা হচ্ছিল তাদের। প্রতিটি বিটে থাকছিলেন দু’জন করে। এ ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী শহরের মধ্যে কোথাও গেলে সেই পথে, বা বাইরে গেলে শহরের সীমানা পর্যন্ত সঙ্গ দিচ্ছিল উইনার্স। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে, রাতের শহরে নজরদারি ও ধরপাকড় চালাতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই বাহিনীকে হঠাৎ ভিভিআইপি-র সুরক্ষার কাজে লাগানো হল কেন? এটা একেবারেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান লালবাজারের কর্তারা। এর পরে গত জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে এক ব্যক্তির ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাঁকে ধরলে জানা যায়, হাসনাবাদের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির কাছ থেকে একটি লোহার রড মিলেছে। সাত ঘণ্টা ধরে ওই রড নিয়ে সেই ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের বাইরেই অপেক্ষায় ছিলেন। রাতে কোনও কারণে মুখ্যমন্ত্রী ঘর থেকে বেরিয়ে এলে কী ঘটতে পারত, ভেবেই আতঙ্ক তৈরি হয়। অথচ, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগে থেকেই ‘জ়েড প্লাস’ নিরাপত্তা পান মমতা। তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে এক জন ডিজি পদমর্যাদার অফিসার দায়িত্বে থাকেন। তাঁর অধীনে থাকেন একাধিক আইপিএস অফিসার। এ ছাড়াও আছে ‘স্পেশ্যাল সিকিয়োরিটি উইং’। নাকের ডগায় কালীঘাট থানা। তা সত্ত্বেও এমন ঘটনায় সমালোচনা শুরু হয় নানা মহলে। ওই সময়েই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা বাড়াতে উইনার্সের কয়েক জন সদস্যকে পরীক্ষামূলক ভাবে মোতায়েন করা হয়।
বর্তমানে উইনার্সের ১২ জন সদস্যকে প্রতিদিন কালীঘাট থানায় হাজির হতে হয় রাত ৯টার মধ্যে। সেখান থেকে স্কুটার নিয়ে বেরোতে হয় পৌনে ১০টা নাগাদ। রাত ১০টা থেকে পরের দিন ভোর ৪টে পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ঘিরে চলে উইনার্সের নজরদারি। প্রতি স্কুটারে দু’লিটার করে জ্বালানি ভরা থাকে। কখনও একটি স্কুটারে দু’জন, কখনও বা এক-একটি স্কুটারে এক জন করে চষে বেড়ান হাজরা, কালীঘাট এলাকা। উইনার্সের এক অভিজ্ঞ সদস্যের কথায়, ‘‘বিশেষ ভাবে দক্ষ মেয়েদেরই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তায় পাঠানো হয়। এর জন্য রাতের শহরে টহল বন্ধ নেই।’’