লোকারণ্য: পুজোর বাকি আর মাত্র সপ্তাহ তিনেক। নিউ মার্কেট চত্বরে কেনাকাটা করার ভিড়ে মুছে গিয়েছে দূরত্ব-বিধি। নিজস্ব চিত্র।
বাচ্চার জামা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দরদাম করছিলেন মাঝবয়সি এক মহিলা। পাশেই কয়েক জন ক্রেতা তত ক্ষণে ঘিরে ধরেছেন দোকানিকে। বিরক্ত ক্রেতা তারস্বরে মহিলাকে বলে উঠলেন, ‘‘দিদি, নেওয়ার হলে নিন, না হলে ছেড়ে দিন। অযথা ব্যবসা নষ্ট করবেন না। বহু দিন পরে ক্রেতার মুখ দেখছি।’’ নিউ মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর এমন কথোপকথন বুঝিয়ে দিচ্ছিল, দোনামনা করে হলেও পুজোর আমেজ শেষ পর্যন্ত এসেই গিয়েছে।
যদিও রবিবারের দিনভর জমজমাট বাজারে খানিক তাল কেটেছিল দুপুরের এক পশলা বৃষ্টি। আর তা থামতেই সন্ধ্যায় ক্রেতার ভিড় দেখা গেল শহরের শপিং মল এবং বিভিন্ন বাজারে। সংক্রমণের আতঙ্ক, সঙ্গে ঘন ঘন নিম্নচাপের চোখরাঙানি— পুজোর বাজারে যেন জোড়া কাঁটা। দুর্গাপুজোর তিন সপ্তাহ আগের রবিবার। তাই ভিড় নিয়ে শপিং মল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত থাকলেও সন্দিহান ছিলেন নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগানের ব্যবসায়ীরা। সকালে ক্রেতার আনাগোনা শুরু হলেও দুপুরের খানিক বৃষ্টি মনমরা করে দিয়েছিল বিক্রেতাদের। তবে বৃষ্টির জল বেশি দূর না গড়ানোয় বিকেল হতেই ভিড় বাড়তে থাকল। যা দেখে হাসি ফিরল শপিং মল আর সাবেক বাজারের বিক্রেতাদের মুখে। ব্যবসায়ীদের মতে, ‘‘পুজোর আগে সংক্রমণ নতুন করে না বাড়লে এ ভাবে হলেও তবু কিছু লক্ষ্মী ঘরে ঢুকবে।’’
আগাম ভিড় আঁচ করে এ দিন সকাল থেকে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল গড়িয়াহাট মোড়ে। এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘কয়েক দিন ধরেই কম-বেশি কেনাকাটার ভিড় বাড়ছিল। রবিবারে ভিড় বাড়তে পারে ভেবেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেলের পর থেকে ভিড় নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো ঘাম ছুটেছে।’’ খুশি ব্যবসায়ীরাও। বিক্রেতা রাজদীপ সাহা বললেন, ‘‘অন্য বছরের মতো না হলেও গত বছরের তুলনায় বেশি লোক আসছেন। এ রকম চললে এ বছর কিছু লাভের আশা করতেই পারি।’’
নিউ মার্কেটের ভিড় ঠেলে বাজার করা জয়িতা চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘প্রতিষেধকের দুটো ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই একটু ঘুরে ঘুরে বাজার করতে এলাম। তবে এত ভিড় হবে ভাবিনি।’’
হাতিবাগানের ব্যবসায়ী দিবাকর সরকারের গলায় স্বস্তির সুর, ‘‘গত বছর তো পুজোর আগে মাছি তাড়িয়েছিলাম। এ বার সপ্তাহখানেক হল তা-ও কিছু ক্রেতার দেখা মিলছে। যা জিনিস তুলেছি, তা সব বিক্রি হলেই শান্তি।’’
শহরের প্রতিটি শপিং মলেই আগের রবিবারের ভিড়কে টেক্কা দিয়েছে এই রবিবার। দক্ষিণের একাধিক শপিং মলেই ক্রেতার আনাগোনা ছিল দিনভর। বেলা যত গড়িয়েছে ভিড় ততই বেড়েছে। প্রিন্সআনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মলের জেনারেল ম্যানেজার দীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত সপ্তাহের রবিবার সারা দিনে আমাদের ‘ফুটফল’ হয়েছিল ৬২ হাজার। এ দিন পাঁচটার মধ্যেই সেই সংখ্যা টপকে গিয়েছে। ফলে মোট ‘ফুটফল’ এক লক্ষ হলেও অবাক হব না।’’
বাজার থেকে শপিং মল— সর্বত্র ভিড় যত বেড়েছে, ততই কিন্তু শিকেয় উঠেছে দূরত্ব-বিধি। মাস্কও যে সবার মুখে ছিল, এমনটা নয়। এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকেরা। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী বলছেন, ‘‘প্রতিষেধকের দুটো ডোজ় হয়ে গিয়েছে, অতএব বাজারের ভিড়ে যেতে বাধা নেই। এই মানসিকতাই বিপজ্জনক। সঙ্গে দূরত্ব-বিধি না মানা, আর মাস্ক না পরার প্রবণতা সংক্রমণ আবারও বাড়িয়ে দিতে পারে। এ বছর তাই যতটা সম্ভব ঘরে থাকাই ভাল।’’