প্রতীকী ছবি।
পেশাদার অপরাধী না-হওয়া সত্ত্বেও চুরি বা লুট করতে এসে ধরা পড়ার ভয়ে খুন করতে পিছপা হচ্ছে না ছোটখাটো দুষ্কৃতীরা। আদতে যারা ছিঁচকে চোর বলেই পরিচিত। লালবাজার সূত্রের খবর, গত তিন-চার বছরে এই ধরনের ছিঁচকে চোরদের দাপট বেশ বেড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে তিলজলা থানা এলাকার কুষ্টিয়া সরকারি আবাসনে এক মধ্যবয়সি ব্যক্তির গলা কাটা দেহ উদ্ধার হয়। ওই খুনের ঘটনায় যারা ধরা পড়েছে, তাদের অতীত অপরাধের কোনও রেকর্ড নেই। এমনকি, মূল অভিযুক্তও নিহত ব্যক্তির পূর্ব পরিচিত। লালবাজারের হোমিসাইড শাখার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘গত তিন বছরের পরিসংখ্যান বলছে, চুরি বা লুটের উদ্দেশ্যে বাড়িতে ঢুকে গৃহকর্তার বাধার মুখে পড়ায় তাঁকে খুন করার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে খুনিরা হয় রঙের মিস্ত্রি, অথবা সাধারণ চোর।’’
২০১৭ সালের অগস্টের এক সকালে নিউ আলিপুরের একটি বাড়ির দোতলার শোয়ার ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারের দেহ৷ আগের রাতে সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ির পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে পড়েছিল দুই চোর৷ যারা অতীতে ওই বাড়িতে একাধিক বার আম চুরি করতে এসেছিল। বিশাল ওই বাড়ির চত্বরে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে অন্ধকারে ঘাপটি মেরে সকলের ঘুমিয়ে পড়ার অপেক্ষা করেছিল তারা৷ রাত দেড়টা নাগাদ প্রথমে তারা গ্রিলের তার কেটে ঘরের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে৷ পরে দরজার তালা ভেঙে উপরে ওঠে৷ চুরির উদ্দেশ্যে যখন দুই ভাই খানাতল্লাশি চালাচ্ছে, তখনই সেই আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় বৃদ্ধ মলয় মুখোপাধ্যায়ের৷ ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে বৃদ্ধকে খুন করে দুই চোর৷ তার পরে বাড়ি থেকে প্রচুর জিনিসপত্র নিয়ে পালায়।
বছর দুই আগে নেতাজিনগর থানা এলাকায় নিজেদের বাড়িতে খুন হয়েছিলেন এক প্রবীণ দম্পতি। আগে কাজ করে যাওয়া এক রং মিস্ত্রি লুট করতে এসেছিল ওই বাড়িতে। সে-ই ওই দম্পতিকে খুন করে জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। একই ভাবে বছর দুয়েক আগে বেহালার পর্ণশ্রীতে একাকী এক বৃদ্ধাকে গলা টিপে খুন করে চলে যায় কয়েক জন রং মিস্ত্রি।
পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িতে যাঁরা একা থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা বার বার ঘটছে। এই ধরনের অপরাধ ঠেকাতে লালবাজারের তরফে বিভিন্ন আবাসন ও বাড়িতে আরও বেশি করে সি সি ক্যামেরা বসানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার তিলজলার আবাসনে এক মধ্যবয়সি ব্যক্তির গলা কাটা দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে সেখানকার সি সি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরেই দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। লালবাজারের পরামর্শ মেনে ওই আবাসনে আরও প্রায় ১০টি সি সি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানিয়েছেন আবাসন কমিটির সম্পাদক টিটো মুখোপাধ্যায়।
তিলজলার ওই আবাসনের ফ্ল্যাটে জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়ও (৪৫) একাই থাকতেন। তাঁকে খুন করে চলে গিয়েছিল দুই যুবক। লালবাজার সূত্রের খবর, শহরের যে সমস্ত আবাসন বা বাড়িতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা একা থাকেন, তাঁদের নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রতিটি থানাকে সতর্ক করা হয়েছে। ওই সমস্ত আবাসন ও বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে পুলিশকে। সেই সব জায়গায় পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা লাগানোর ব্যাপারেও পুলিশের তরফে অনুরোধ করা হবে।
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘শহরবাসীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রতিটি থানা এলাকায় টহলদারি বাড়ানো হবে। বিভিন্ন আবাসনের বাসিন্দাদের সংগঠনকে বলা হবে, সেখানে একা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকলে তাঁদের উপরে যেন আলাদা ভাবে নজর রাখা হয়।’’