যানজটে নাকাল হওয়ার আশঙ্কায় সকাল থেকেই রাজপথে গা়ড়ি নেমেছিল কম। কার্যত তারই সৌজন্যে শুক্রবার বিকেলে শারদোৎসবের শেষ পরীক্ষাতেও উতরে গেল কলকাতা পুলিশ।
পুজো শেষে খুলে গিয়েছে বহু অফিস, দোকানপাট। পথেঘাটে লোকজনও বেরিয়ে পড়েছেন। এমন দিনে রাজপথে পুজো-শোভাযাত্রার জেরে যানজটের আশঙ্কা ছিল। আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছিল রেড রোডের শোভাযাত্রা ঘিরে পুলিশি পরিকল্পনা। লালবাজারের কর্তারা ঠিক করেছিলেন, শোভাযাত্রার জন্য বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু বিকেলে পথে সে ভাবে গাড়ি না নামায় সব রাস্তা বন্ধই করতে হয়নি পুলিশকে। তা সত্ত্বেও অবশ্য যানজট পুরোপুরি এড়াতে পারেনি লালবাজার। ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রি়ট, চৌরঙ্গি চত্বরে ভালই যানজট হয়েছে। তবে ওইটুকুই!
উৎসব কাপে কলকাতা পুলিশকে কিছুটা বিব্রত করেছে রেড রোডে একটি দুর্ঘটনাও। পুলিশ জানিয়েছে, দুপুরে রেড রোডে একটি মোটরবাইকের ধাক্কায় এক পথচারী আহত হন। কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে কী ভাবে এমন ঘটল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তের প্রতিমা, ট্যাবলো রে়ড রোডে এসেছে। সে সময়ও অল্পবিস্তর যানজট হয়েছে। শোভাযাত্রা শেষে অন্তত ১২টি পুজো প্রতিমা ও ট্যাবলো নিয়ে নিজের এলাকা বা পছন্দসই ঘাটে ফিরে গিয়েছে। তাদের সেই ফিরতি পথেও যানজট হয়েছে। তবে তা স্থায়ী হয়নি। লালবাজারের এক ট্রাফিক কর্তার কথায়, ‘‘যানজট হওয়ার জন্য রাস্তায় যানবাহন প্রয়োজন হয়। সেটাই তো আজ পর্যাপ্ত ছিল না!’’
লালবাজার সূত্রের খবর, এ দিন শোভাযাত্রা শুরুর আগে থেকেই রেড রোড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বন্ধ করে দেওয়া হয় ডাফরিন রোড, হসপিটাল রোড, আউট্রাম রোড-সহ রেড রোডের সংযোগকারী বিভিন্ন রাস্তা। ফলে বিবাদী বাগ বা হাওড়া থেকে দক্ষিণ কলকাতার দিকে যাওয়া সব গাড়িকে জওহরলাল নেহরু রোড দিয়ে এক্সাইড মোড়ের দিকে পাঠানো হয়। উল্টো দিকে হসপিটাল রোড, খিদিরপুর রোড বন্ধ থাকায় আলিপুর, বেহালা থেকে আসা গাড়িগুলিকে এক্সাইড মোড় থেকে জওহরলাল নেহরু রোড দিয়ে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট হয়ে বিবাদী বাগে পাঠানো হয়েছিল।
পুলিশের একাংশের দাবি, এজেসি বসু রোডে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় এক সময়ে জওহরলাল নেহরু রোডে দক্ষিণ কলকাতামুখী গাড়ির সারি লম্বা লাইন পৌঁছে গিয়েছিল পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলের উপরে। ওই সময়েই রাজাবাজার থেকে বাসে খিদিরপুরে যাচ্ছিলেন দশরথ দাস। ধর্মতলা হয়ে এক্সাইড মোড়ে পৌছতে তাঁর সময় লাগে প্রায় ২৫ মিনিট। সাধারণ দিনে ওই রাস্তা পেরোতে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগে না।
তবে গাড়ি কম থাকলেও কলকাতা পুলিশের কৃতিত্বকে খাটো করতে চাইছেন না পুজো উদ্যোক্তাদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, এ দিন না হয় গাড়ি কম ছিল। কিন্তু চতুর্থী-পঞ্চমীর ধাক্কা সামলে পুলিশ যে ভাবে ষষ্ঠী থেকে শহরের বেশির ভাগ রাস্তায় যান ও ভিড় সামলেছে, তার নজির মেলা ভার। পুলিশের একাংশ-ও বলছে, গড়িয়াহাটের মতো কিছু এলাকা বাদ দিলে বাকি শহর মোটামুটি ভাবে সামলে দিয়েছে তারা।
সামগ্রিক ভাবে পুলিশের ভূমিকায় উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তাঁর মার্কশিটে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পেয়েছেন ১০০-য় ১০১!