মার্শাল আর্ট শেখাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের তেজস্বিনী প্রকল্পের এক প্রশিক্ষক। এক প্রশিক্ষক বললেন, ‘‘এ মাসেই নতুন সদস্যেরা নেমে পড়বেন। কলকাতা আরও নিরাপদ হবে।’’
ফাইল চিত্র।
রাতপথে মহিলাদের নিরাপত্তায় নজরদারি চালিয়ে প্রথম থেকেই প্রশংসা কুড়িয়েছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ মহিলা বাহিনী ‘উইনার্স’। ভূয়সী প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রতিটি পুলিশ কমিশনারেটে এমন বাহিনী তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকর্তাদের। এই পরিস্থিতিতে ধারে-ভারে আরও বাড়তে চলছে উইনার্স। পুলিশ সূত্রের খবর, নতুন ৩০ জন নিযুক্ত হতে চলেছেন এই বাহিনীতে। কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে (পিটিএস) আপাতত তাঁদের প্রশিক্ষণ চলছে।
রাজীব কুমার পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন ২০১৮ সালের ১১ জুলাই আত্মপ্রকাশ ঘটে এই বাহিনীর। মূলত সন্ধ্যা ও রাতের পথে মহিলাদের নিরাপত্তার জন্যই এই বাহিনীর সৃষ্টি। বাছাই করা মহিলা পুলিশকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয় ২০১৮-র মার্চ মাস থেকে। মোটরবাইকে সওয়ার এই বাহিনী মার্শাল আর্টের পাশাপাশি আধুনিক সব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারেও সিদ্ধহস্ত। তিন অফিসারের পাশাপাশি এই মুহূর্তে বাহিনীতে রয়েছেন ৩৬ জন পুলিশকর্মী। গত তিন বছরে পাঁচশোরও বেশি জনকে গ্রেফতার করেছেন বাহিনীর সদস্যেরা। লালবাজারের দাবি, উইনার্স বাহিনীর দাপটেই গত দু’বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে ইভ-টিজ়িংয়ের ঘটনা। দেশে সাড়া ফেলা একাধিক ধর্ষণের ঘটনার পরেও এই বাহিনীকে বাড়তি নজরদারি চালাতে দেখা গিয়েছে শহরের রাস্তায়। যে যে জায়গা থেকে অতীতে মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের অভিযোগ সব থেকে বেশি এসেছে, সেখানেই দেখা গিয়েছে এই বাহিনীর বিশেষ তৎপরতা। দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর সময়ে এই বাহিনীর ভূমিকাও প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এর মধ্যেই গত বছরের ২৫ অগস্ট থেকে উইনার্সকে মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথের নিরাপত্তার বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিছু দিনের জন্য বাহিনীর মূল কাজ, রাতের টহল বন্ধ রাখা হয় বলে খবর। ওই বাহিনীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘মূলত কালীঘাট থেকে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর যাতায়াতের পথে রাখা হচ্ছিল আমাদের। প্রতিটি বিটে আমাদের দু’জন করে থাকছিল। এ ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী শহরের মধ্যে কোথাও গেলে সেই পথে বা বাইরে গেলে শহরের সীমানা পর্যন্ত সঙ্গ দিচ্ছিলাম। এর বাইরের কাজ তখন বন্ধ ছিল।’’
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, রাতের শহরে নজরদারি ও ধরপাকড় চালানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই বাহিনীকে হঠাৎ ভিভিআইপি-র গতিবিধি দেখার কাজে লাগানো হল কেন? রাতে মহিলাদের নিরাপত্তা তা হলে সামলাবেন কারা? লালবাজার যদিও জানিয়েছিল, এটা একেবারেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই বাহিনীর কাজে খুব খুশি। তাই তাদের নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের ‘শক্তি’ বাহিনী রয়েছে। যার সব সদস্যই মহিলা। এ ছাড়াও রয়েছে যে কোনও সশস্ত্র হামলার মোকাবিলায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলা বাহিনী ‘ওয়ারিয়র্স’। তবে সমালোচনা চলতে থাকায় পরবর্তীকালে রাতে টহল এবং মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথের দায়িত্ব দেওয়া হয় উইনার্সের উপরে। বাহিনীর এক সিনিয়র সদস্য বলেন, ‘‘কম লোক নিয়ে দুই কাজ সমান তালে করা যাচ্ছে না। তাই নতুন নিয়োগ হচ্ছে।’’
পুলিশ ট্রেনিং স্কুল সূত্রের খবর, নতুন ৩০ জনের মধ্যে বেশির ভাগই উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা। রাজ্য পুলিশে কনস্টেবল পদে সকলেরই তিন বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। রোজ সকাল ছ’টা থেকে দফায় দফায় সন্ধ্যা পৌনে সাতটা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ চলে। আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার শেখাচ্ছেন স্কুলের ড্রিল ইনস্পেক্টর। মোটরবাইক ও স্কুটার চালানো শেখাচ্ছেন উইনার্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক মহিলা অফিসার। মোটরবাইক ও স্কুটারের যন্ত্রাংশ সম্পর্কে এবং পথ-বিধির পাঠ দিচ্ছেন ট্র্যাফিক পুলিশের আধিকারিকেরা। মার্শাল আর্ট শেখাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের তেজস্বিনী প্রকল্পের এক প্রশিক্ষক। এক প্রশিক্ষক বললেন, ‘‘এ মাসেই নতুন সদস্যেরা নেমে পড়বেন। কলকাতা আরও নিরাপদ হবে।’’