প্রতীকী ছবি।
ছবি তোলা তাঁর নেশা। শান্ত স্বভাব। পাড়ায় ‘ভাল’ ছেলে বলেও পরিচিত। সেই সুবাদে পাড়ার বিভিন্ন বাড়িতে যাতায়াত ছিল কৃশানু বিশ্বাসের। বেহালা চৌরাস্তা লাগোয়া ডাক্তার এ কে পাল রোডের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, অবাধ যাতায়াতের সুযোগকে ‘কাজে লাগিয়ে’ বহু দিন ধরে পাড়ার শিশু, যুবতী, প্রৌঢ়াদের অসতর্ক মুহূর্তের ছবি তুলেছেন তিনি। বাদ যাননি আত্মীয়াও। সেই সব ছবি পেন ড্রাইভে পুরেও রেখেছিলেন। সম্প্রতি কৃশানুর অসতর্কতাতেই সেই ছবির ভাঁড়ারের কথা জানাজানি হয়। অভিযোগ দায়ের হয় পর্ণশ্রী থানায়।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই কৃশানু বেপাত্তা ছিলেন। রবিবার বিকেলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন কৃশানুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিজনেদের খোঁজ মেলেনি। এলাকাবাসীদের দাবি, সকালেই কৃশানুর বাবা, মা ও কাকা বা়ড়ি ছে়ড়ে চলে গিয়েছেন। সকালে তদন্তকারীরা গিয়ে বাড়ি থেকে কৃশানুর একটি মোবাইল ও ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেন।
স্থানীয়েরা জানান, কৃশানুর সঙ্গে এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর দোলা সরকারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ওই যুবক শাসক দলের বুথ এজেন্টও ছিলেন। ঘটনার পরে দোলাদেবীই অভিযুক্তকে আশ্রয় দেন বলেও অভিযোগ। কৃশানু যে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন, তা স্বীকার করে দোলাদেবীর বক্তব্য, ‘‘আমি ওকে আশ্রয় দিইনি।’’ স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর রত্না রায় মজুমদার বলেন, ‘‘এমন যুবকের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।’’
এলাকার বাসিন্দারা জানান, ক্যামাক স্ট্রিটের রাজ্য সরকারি একটি অফিসে চুক্তিভিত্তিক কর্মী কৃশানু ওরফে জনি। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। গত সপ্তাহে অফিসেই কৃশানুর পেনড্রাইভটি পান তাঁর এক সহকর্মী। তিনি দেখেন, বিভিন্ন মহিলার ১২০০টি ছবি, ভিডিয়ো রয়েছে এবং প্রত্যেকটি অসতর্ক মূহূর্তের। তার মধ্যে অফিসের এক কর্মীরও ছবি ছিল। তিনি কৃশানুর আত্মীয়ও। স্থানীয়দের বক্তব্য, ওই মহিলা শুক্রবার রাতে ঘটনাটি পা়ড়ায় জানালে কৃশানুকে মারধর করেন কয়েক জন। ওই ছবি দেখে তাঁরা জানিয়েছেন, প্রায় ছ’-সাত বছর ধরে এই কাণ্ড ঘটাচ্ছিল কৃশানু। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কখনও রাস্তায় যেতে যেতে ছবি তুলেছে, কখনও বা বাড়ির ছাদ থেকে।’’ আর এক মহিলা বলেন, ‘‘ও তো প্রায় এক ঘণ্টা ধরে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কানে ফোন নিয়ে দাঁত মাজত। সে সময়েও হয়তো ছবি তুলত।’’
মনোবিদদের একাংশের মতে, এই সব ছবি দেখে অনেকে যৌনতৃপ্তি লাভ করেন। এটা এক ধরনের যৌনবিকৃতি। আবার মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের মতে, উত্তেজক ভঙ্গিমার ছবি বিভিন্ন পত্রিকাতেও দেখা যায়। কিন্তু চুপিচুপি ছবি তোলার একটা উত্তেজনা থাকে। সেই ছবি রেখে দেওয়ার অর্থ, পরবর্তী কালে তা দেখে উত্তেজিত হওয়ার বাসনা ছিল ওই যুবকের।