জল জমে নেই, ঝোপজঙ্গল সাফ করা হয়েছে। তবুও সেখানে জ্বরের সংক্রমণ ঘটছে। বর্ষার শুরু থেকেই মশার দাপটে কুপোকাত হয়েছে দক্ষিণ দমদম। শেষবেলায় আচমকা মশার দাপট বৃদ্ধিতে রোগের প্রকোপ বেড়েছে বিধাননগর পুর এলাকায়।
উপরন্তু শুরু হয়েছে অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ। তাকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের বহু সমর্থক এখন সল্টলেক ও কলকাতার বিভিন্ন হোটেলে রয়েছেন। তাঁদের সুরক্ষিত রাখতে এবং বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সর্বত্র মশা নিয়ন্ত্রণে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে পুরসভা। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলেছে। কিন্তু তাতেও উদ্বেগ কাটছে না পুরসভার। কেন না ফের দক্ষিণ দমদম থেকে শুরু করে দেগঙ্গা হয়ে, রাজারহাট, কেষ্টপুর সল্টলেকই শুধু নয় ডেঙ্গি থাবা বসিয়েছে দক্ষিণ কলকাতাতেও। শুক্রবার থেকে শনিবারের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের।
দক্ষিণ দমদম পুর এলাকা লাগোয়া বিধাননগর পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জ্বরের সংক্রমণ। তার মধ্যে খোদ মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায়ের ওয়ার্ড ১০ নম্বরে একাধিক বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে পুরসভা সূত্রের খবর। রবিবার দিনভর নিজের ওয়ার্ডে মশা নিয়ন্ত্রণের এক দফা কাজ করেছেন মেয়র পারিষদ। বর্ষা বিদায়ের সময়েও নতুন করে মশার দাপট এবং মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন পুরসভা।
পুর প্রশাসনের একাংশ বলছেন, লাগাতার প্রচার এবং মশা নিয়ন্ত্রণের কাজের ফলে অগস্ট পর্যন্ত
পরিস্থিতি তুলনায় স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু অগস্টের শেষ দিক থেকে আচমকাই জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। ৪ নম্বর বরোর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সল্টলেকের লাগোয়া দু’টি খালপাড় সংলগ্ন ব্লকে একের পর এক ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হন। এখনও পর্যন্ত তিন শতাধিক ব্যক্তি অসুস্থ হয়েছেন। তার মধ্যে আট জনের মৃত্যু হয়েছে।
কেন আচমকা এই প্রকোপ বৃদ্ধি? তার কারণ সুস্পষ্ট নয় পুরসভার কাছে।
ঠিক এই সময়েই বিশ্বকাপের আসর বসেছে সল্টলেকে। বিদেশি সমর্থক থেকে খেলোয়াড় সকলেই সল্টলেক এবং কলকাতায়। পুরসভার দাবি, ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রয়েছে। হোটেলগুলিকে কেন্দ্র করে আড়াইশো মিটার এলাকা সাফাইয়ের কাজ, মশার তেল স্প্রে, ফগিংয়ের কাজ হয়েছে।
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের মধ্যেও বড় ও ছোট ফগিং মেশিন দিয়ে তেল ছড়ানোর কাজ চলছে। পাশাপাশি আবর্জনা ও ঝোপজঙ্গল সাফাইয়ের দিকে অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ১২টি অতিরিক্ত ফগিং মেশিন, ৬টি ছোট মেশিন কেনা হয়েছে।
কিন্তু তার পরেও উদ্বেগ কাটেনি পুরসভার। কর্মীদের একাংশের কথায়, বিধাননগরের বাকি অংশে এ বার জোরকদমে কাজ করা সত্ত্বেও জ্বরের সংক্রমণ হচ্ছে। বিদেশিদের কারও ক্ষেত্রে তেমন হলে মুখ পুড়বে প্রশাসনের। ফলে বিশ্বকাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চিন্তা কাটছে না। মেয়র পারিষদ প্রণয়বাবু বলেন, ‘‘সব রকমের প্রতিরোধক পদক্ষেপ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা অতিথিদের সুরক্ষার দিকে সর্বতো নজর দেওয়া হয়েছে। তবে চিন্তা থাকছেই। যে ভাবে কাজ হয়েছে, তাতে নির্বিঘ্নেই বিশ্বকাপের আয়োজন শেষ করা সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস।’’