বিপদ: ফুটপাত জুড়ে পড়ে আছে ঝড়ে ভেঙে পড়া ডাল। ই এম বাইপাসে। ছবি: শৌভিক দে
বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙতে গিয়ে হামেশাই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুরকর্মীদের। কখনও সখনও জোটে মারধরও। কোথাও আবার নির্বীজকরণের জন্য পথকুকুরদের ধরতে গিয়ে পশুপ্রেমীদের হাতে হেনস্থা হতে হয় তাঁদের। একই ঘটনা ঘটে বিপজ্জনক গাছ কেটে ফেলতে গেলেও! তেড়ে আসেন এলাকার লোকজন। তাঁদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুরকর্মীদের।
এক দিকে স্বঘোষিত পরিবেশকর্মীদের প্রতিবাদ! অন্য দিকে, বিপজ্জনক গাছ কাটা নিয়ে কলকাতা পুরসভা ও বন দফতরের পারস্পরিক চাপান-উতোর। আর এই দুইয়ের জটেই বিপজ্জনক গাছ কাটতে গিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে কলকাতা পুরসভা। অথচ, সাম্প্রতিক দু’টি ঝড়ের বেগ এমনই ছিল যে, গাছ এমনিই উপড়ে গিয়েছে মাটি থেকে। গত বৃহস্পতিবারের ঝড়েও বেশ কয়েকটি গাছ উপড়েছে। তার আগের সপ্তাহের ঝড়ে ১৫০টির মতো গাছ যে উপড়েছে, সেগুলি এখনও সব জায়গা থেকে সরানো যায়নি। ফলে শহরে বিপজ্জনক গাছের বিপদ ক্রমশ বাড়ছে বলেই মনে করছে পুর প্রশাসনের একাংশ।
পুরসভা সূত্রের খবর, দু’বছর আগে যাদবপুরে একটি গাছ পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। তার পরেই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, শহরে ক’টি বিপজ্জনক গাছ রয়েছে, তা চিহ্নিত করা হবে। সেই মতো বন দফতর ও কলকাতা পুরসভা যৌথ ভাবে সমীক্ষা চালিয়ে প্রায় পাঁচশোটি বিপজ্জনক গাছকে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু সেই গাছগুলি কাটা হবে কি না, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।
পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিপজ্জনক গাছ কাটতে যাওয়ার বিপদ ষোলো আনা। কারণ, গাছ কাটতে গেলেই পরিবেশপ্রেমীদের একাংশ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন। বিপজ্জনক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে বলেই যে গাছটি কেটে ফেলা দরকার, সেটা তাঁদের বোঝানোই কঠিন হয়ে ওঠে। এমনিতেই নানা প্রকল্পের জন্য গাছ কাটতে হয়। তার একটা আলাদা ঝামেলা রয়েছে। তার উপরে বিপজ্জনক গাছের ঝুঁকি আর কে নিতে যায়! এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘বিপজ্জনক গাছ কাটলেও বাধা দেন অনেকে। আইনেরও দ্বারস্থ হন। কিন্তু তাঁদের বোঝানো যায় না যে, বিপদ এড়ানোর জন্যই চিহ্নিত গাছটি কেটে ফেলা প্রয়োজন।’’
অবশ্য বিপজ্জনক গাছ কাটা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ যে যুক্তি দিচ্ছেন, তার মধ্যে ‘অজুহাত’-এর গন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। পরিবেশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে পুরসভা নিজের ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করে না বলেই গাছ কাটতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হয় পুরকর্মীদের। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের মতে, ‘‘পুরসভার উচিত গাছ লাগানোয় মন দেওয়া। সেটা তো হয় না। যাঁরা গাছ কাটতে গেলে প্রতিবাদ করছেন, আগে থেকে তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে নিলেই তো হয়। বন দফতর অনুমতি দিলে তো সমস্যা হওয়ার কোনও কথা নয়।’’
সেই অনুমতি পাওয়া নিয়েই টানাপড়েন চলছে বলে মনে করছেন পুর প্রশাসনের একাংশ। পুর আধিকারিকদের একাংশের দাবি, যৌথ ভাবে সমীক্ষা করা হলেও বিপজ্জনক গাছ কাটা হবে কি না, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি বন দফতর। অর্থাৎ, গাছ কাটার দায় তারা নিতে চায়নি। কিন্তু বন দফতরের অনুমতি পাওয়া না গেলে গাছ কাটা যাবে না। তাই এ ব্যাপারে পুরসভাও আর এগোয়নি। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘বিপজ্জনক গাছ কাটা হবে কি না, সে ব্যাপারে তখন কিছু নির্দিষ্ট করে জানায়নি বন দফতর। আমরা তো আর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না!’’ আর বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলছেন, ‘‘পুরসভা চাইলে আমরা এ ব্যাপারে পরামর্শ দেব। তারা গাছ কাটার জন্য আবেদন করেছে কি না, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’