প্রতীকী ছবি।
মোবাইলে আসা ভিডিয়ো কল ধরলেই ভেসে উঠছে কমবয়সি তরুণ-তরুণীর মুখ। কথা চালাতে চালাতেই হঠাৎ করে তাদের কেউ বিবস্ত্র হয়ে যাচ্ছে, নয়তো সামনের টিভি বা ল্যাপটপে চালিয়ে দিচ্ছে পর্ন ভিডিয়ো! ফোনটি যাঁর কাছে এসেছে, তিনি প্রতিবাদ করলেও নিস্তার নেই। তত ক্ষণে উঠে গিয়েছে ভিডিয়ো কল রিসিভ করা ব্যক্তির ‘স্ক্রিনশট’। এর পরে সেটি এডিট করে পর্ন ক্লিপের সঙ্গে স্ক্রিনশট জুড়ে দিয়ে শুরু হচ্ছে হুমকি, টাকা চেয়ে ব্ল্যাকমেল!
এত দিন বিষয়টি আটকে ছিল আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে। এ বার একটি মৃত্যুর পিছনে এমন ভিডিয়ো কলই দায়ী বলে অভিযোগ উঠল। ঘটনাচক্রে, মৃত ব্যক্তি অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরার সহকারী বলে জানা গিয়েছে। লালবাজারের গোয়েন্দাকর্তা জানিয়েছেন, ওই অভিনেতা নিজে বৃহস্পতিবার তাঁকে ফোন করে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, বছর ছত্রিশের মৃত যুবকের নাম পিন্টু দে। নারকেলডাঙার নর্থ রোড এলাকার একটি তিনতলা বাড়ির একতলার ফ্ল্যাট থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ। পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে এন আর এসে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
বৃহস্পতিবার নারকেলডাঙা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের বোন প্রিয়াঙ্কা দে। তাঁর দাবি, পিন্টুর হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তাঁরা জেনেছেন, দিন কয়েক আগে তিনি একটি ভিডিয়ো কল পেয়েছিলেন। এক তরুণী সেই কলে পিন্টুর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই জামাকাপড় খুলে ফেলেন। তখন ফোন কেটে দেন পিন্টু। দিন কয়েক পরে নিজেকে লালবাজারের গোয়েন্দা হিসেবে পরিচয় দিয়ে পিন্টুকে ফোন করে এক ব্যক্তি। তার দাবি, পিন্টুর বিরুদ্ধে এক তরুণী পুলিশে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের করেছে। তাঁকে একটি স্ক্রিনশটও পাঠায় ওই ব্যক্তি। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিবস্ত্র তরুণীর সঙ্গেই স্ক্রিনে রয়েছে পিন্টুর মুখ।
অভিযোগ, এর পরেই একাধিক নম্বর থেকে টাকা চেয়ে হুমকি ফোন পেতে শুরু করেন পিন্টু। কয়েক দফায় টাকা দেওয়ার পরেও ফোন আসা বন্ধ হয়নি। সেই চাপ নিতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন পিন্টু। এমনটাই দাবি পরিবারের।
পুলিশের তরফে সাইবার থানায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃতের মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘এমন চক্র সম্প্রতি সক্রিয় হয়েছে। তবে এখনও পুলিশে অভিযোগ এসেছে মাত্র তিনটি। বিষয়টি ব্যক্তিগত রাখতে অনেকেই পুলিশের দ্বারস্থ হননি। ফাঁদ এড়াতে অচেনা নম্বর থেকে আসা ভিডিয়ো কল এড়িয়ে চলুন।’’