প্রতীকী ছবি।
লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের কাছে সরাসরি স্মার্টফোন মারফত বিনোদন পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় রেল। করোনা পর্বে সেই প্রস্তুতি খানিকটা ধাক্কা খেয়েছে। তাই স্মার্টফোনে নির্দিষ্ট অ্যাপ নামিয়ে ওয়াইফাই মারফত ‘কন্টেন্ট অন ডিমান্ড’ (যাত্রীদের পছন্দসই যে কোনও বিনোদন) পৌঁছে দেওয়ার ওই পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার আগেই লোকাল ট্রেনের কামরায় পূর্ব রেলের তরফে গান শোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কী ভাবে? মিউজ়িক সিস্টেমের মাধ্যমে গান বাজানোর ব্যবস্থা চালু করেছে পূর্ব রেল। আপাতত জরুরি ঘোষণার মাঝে অডিয়ো সিস্টেমে আগে থেকে রেকর্ড করা রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর বাজানো হচ্ছে। ট্রেন সফরের ক্লান্তি দূর করতে ওই ব্যবস্থা। লকডাউন পর্বেই রেলের ওয়ার্কশপে লোকাল ট্রেনের রেকে ওই যন্ত্র বসানো শুরু হয়েছিল। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে এখন শিয়ালদহ ডিভিশনের ৪৮টি এবং হাওড়া ডিভিশনের ৪২টি রেকে ওই ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
বছর দেড়েক আগেই শিয়ালদহ ও হাওড়া ডিভিশনের লোকাল ট্রেনে জিপিএস নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই ট্রেনের গন্তব্য এবং আসন্ন স্টেশন সম্পর্কে তথ্য যাত্রীদের দেওয়া শুরু হয়েছিল। ওই ব্যবস্থা চালু হওয়ায় যাত্রীরা চলন্ত ট্রেনে বসে পরবর্তী স্টেশনের নাম এবং দূরত্ব জানতে পারছেন। এ বার সেই ব্যবস্থাকেই আরও উন্নত করে গানের সুর বাজানোর প্রযুক্তি যোগ হয়েছে। ধাপে ধাপে হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনের সব লোকাল ট্রেনেই ওই প্রযুক্তি যুক্ত করতে চান রেল কর্তৃপক্ষ।
হাওড়া ডিভিশনের ৫৯টি রেকের সবগুলিই ১২ কামরার। তার মধ্যে ৪২টি রেকের যন্ত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর বাজানো হচ্ছে। শিয়ালদহ ডিভিশনে ১০টি ন’কামরার রেক এবং ৩৮টি ১২ কামরার রেকে ওই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘকাল বন্ধ থাকার পরে গত ১১ নভেম্বর শহরতলির লোকাল ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়েছে। এর পর থেকে ধাপে ধাপে লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। হাওড়া এবং শিয়ালদহ মিলে শহরতলির ট্রেনে এখন প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। তাঁদের সফরের ক্লান্তি লাঘব করতে ওই পরিকল্পনা বলে খবর।
তবে সুর বাজানোর এই উদ্যোগ থেকে আপাতত রেলের আয় নেই। বরং ভবিষ্যতে লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের কাছে ওয়াইফাই মারফত স্মার্টফোনে বিনোদন পৌঁছে দেওয়ার যে পরিকল্পনা হয়েছে, তার থেকে রেল বিজ্ঞাপন খাতে আয়ের সুযোগ পাবে। এ জন্য একটি সর্বভারতীয় সংস্থার সঙ্গে রেলের চুক্তি হয়েছে। স্মার্টফোনে ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্মে ওই সংস্থা এখন সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, সংবাদ চ্যানেল, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখায়। ভবিষ্যতে লোকাল ট্রেনের কামরায় বসে স্মার্টফোনেই পছন্দসই অনুষ্ঠান দেখা যাবে। রেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘কনটেন্ট অন ডিমান্ড ব্যবস্থা চালু হতে এখনও বেশ কিছুটা সময় লাগতে পারে। সর্বভারতীয় পর্যায়ে ওই পরিকল্পনা হচ্ছে। তবে কামরায় অডিয়ো সিস্টেমে যন্ত্রসঙ্গীত শোনানোর ব্যবস্থা একান্তই পূর্ব রেলের।’’
আর নতুন এই ব্যবস্থায় যাত্রীরা সফরের মাঝে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে ‘বাঙালিয়ানা’র আমেজ পাচ্ছেন বলেও রেলের দাবি। যদিও রেলকর্তারা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁরা একে সুস্থ বিনোদন ও ক্লান্তি লাঘবের মাধ্যম হিসেবে দেখতে চান।