দুর্ঘটনা এড়াতে নয়া টার্মিনালের কাচ ঢাকা হবে ‘ফিল্ম’ দিয়ে

কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের সমস্ত কাচ ‘ফিল্ম’ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। কাচ ভাঙলেও যাতে সেই ভাঙা কাচের টুকরো পড়ে কেউ আহত না হন তার জন্য এই বন্দোবস্ত বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ জন্য অতিরিক্ত ন’কোটি টাকা খরচ করতে চলেছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ১৬:২৮
Share:

কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের সমস্ত কাচ ‘ফিল্ম’ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। কাচ ভাঙলেও যাতে সেই ভাঙা কাচের টুকরো পড়ে কেউ আহত না হন তার জন্য এই বন্দোবস্ত বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ জন্য অতিরিক্ত ন’কোটি টাকা খরচ করতে চলেছেন তাঁরা।

Advertisement

রোদ আটকাতে গাড়ির জানলার কাচে যে ধরনের ফিল্ম লাগানো হয়, এ ক্ষেত্রে তার চেয়েও মোটা ফিল্ম ব্যবহার করা হবে বলেই প্রাথমিক ভাবে ঠিক করা হয়েছে। দিন আটেক আগে এর জন্য একটি টেন্ডার ডেকেছেন কর্তৃপক্ষ। কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা অতুল দীক্ষিত বলেন, ‘‘এই টেকনিক্যাল টেন্ডারের পরে কিছু সংস্থাকে বেছে নেওয়া হবে। তার পরে আর্থিক টেন্ডার ডাকা হবে।’’

সোমবার সন্ধ্যায় ইন্ডিগোর নিরাপত্তারক্ষী বিপুল দত্ত টার্মিনালের বাইরে অ্যাপ্রন এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই এলাকায় বিমানগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। সেই সময়েই টার্মিনালের একটি কাচ ভেঙে পড়ে। তার টুকরো পড়ে বিপুলের মাথার উপরে। আহত অবস্থায় তাঁকে বাইপাসের কাছে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই সিটি-স্ক্যান করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপুল এখন ভাল আছেন। গত বছর জুলাই মাসে বিমানবন্দরের মেঝের কাচ ভেঙে একতলা থেকে বেসমেন্টে পড়ে মারা গিয়েছিলেন সিআইএসএফ-এর জওয়ান গৌরচরণ সিংহ।

Advertisement

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে চালু হওয়া নতুন এই টার্মিনালকে বিশ্বমানের বানাতে গিয়ে মেঝের একাংশ-সহ সমস্ত দেওয়ালই কাচ দিয়ে বানানো হয়েছে। প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা দিয়ে এই টার্মিনালটি তাইল্যান্ডের যে সংস্থাটি বানায় তাদের দিয়ে অবশ্য কাচ লাগানোর কাজ করানো হয়নি। অভিযোগ, কাচ সরবরাহের বরাত দেওয়া হয়েছিল কর্তৃপক্ষের পছন্দসই ব্যবসায়ীকে। আর সেই কাচ বসানোর পরেই, টার্মিনাল চালু হওয়ার আগে থেকেই তা ভাঙতে শুরু করে। কখনও দেওয়াল থেকে, কখনও বা মেঝে থেকে। প্রথম দিকে প্রায় নিয়মিত কাচ ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। এখন সংখ্যা কমে গিয়েছে।

প্রতি বারই কাচ ভাঙার পরে সেখানে অন্য কাচ বসিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে এসেছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। অনেক বার যাত্রীদের সামনে, তাঁদের পায়ের কাছে কাচ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। কারণ জানতে এক সময়ে সেই কাচের নমুনা বিদেশে পরীক্ষার জন্যও পাঠানো হয়েছিল। অধিকর্তা দীক্ষিতের দাবি, ‘‘কাচ তৈরির রাসায়নিক গঠনে গণ্ডগোল পাওয়া গিয়েছিল।’’ সূত্রের খবর, লক্ষ করে দেখা গিয়েছে, যে কাচের দু’দিক তাপমাত্রার হেরফেরে বেড়ে গেলে তখনই তা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ঠিক যেমন সোমবার ঘটেছে। অ্যাপ্রনে যে কাচ ভেঙে পড়ে তার এক দিকে প্রচণ্ড রোদের তাপ, আর অন্য দিকটায় টার্মিনালের ভিতরের দিকের ঠান্ডা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

অতুলবাবু বলেন, ‘‘আমরা রাতারাতি টার্মিনালের সমস্ত কাচ তো বদলে ফেলতে পারব না। তাই, ফিল্ম লাগানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে কাচ হয়তো ভাঙবে, তবে তা আর কারও মাথার উপরে ভেঙে পড়বে না। কাচের টুকরো দু’দিকে লাগানো ফিল্মের মাঝে আটকে থাকবে। পরে সেটি সরিয়ে ফেললেই হবে।’’ ফিল্ম বসালে বাইরের তাপ থেকেও কাচকে অনেকটা বাঁচানো যাবে। তাতে তাপমাত্রার হেরফেরও কমে কাচ ভাঙার ঘটনাও কমবে।

কাচ ভেঙে যাতে কেউ আহত না হন তার জন্য ইতিমধ্যেই টার্মিনালের বাইরের দিকে ঢোকা-বেরোনোর প্রতিটি গেটের মাথার উপরে পাকা ছাউনি বানানো হয়েছে। তাতে রোদ-বৃষ্টি ছাড়াও যাত্রীদের ভেঙে পড়া কাচ থেকে বাঁচাবে। যেখানে টার্মিনালের মেঝেতেও কাচ লাগানো রয়েছে, যে কাচ ভেঙে পড়ে মারা গিয়েছিলেন গৌরচরণবাবু, সেই কাচের তলায় লোহার তারজালিও লাগানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement