মেয়ে কার!
এই প্রশ্নেই মঙ্গলবার দিনভর গোলমাল চলল চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
দুপুরে হাসপাতালের আয়ারা বলেছিলেন, ছেলে হয়েছে। রাত আটটায় মায়ের কোলে যাকে এনে দেওয়া হল, সে সদ্যোজাত এক শিশুকন্যা। তখন জানানো হল, ছেলে নয়, মেয়েই হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দু’বার দু’রকম বক্তব্য মানতে নারাজ প্রসূতির পরিবার বুধবার বেনিয়াপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। হাসপাতালের সুপার পীতবরণ চক্রবর্তী জানান, হাসপাতালের তরফে ভুল করে মেয়ের জায়গায় ছেলে লেখা হয়েছিল। অভিযোগ পাওয়ার পরে তদন্ত কমিটি করে সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ও প্রসূতির পরিবারের কাছেও ভুল স্বীকার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকাল থেকে হাসপাতালে কোনও ছেলে সন্তান জন্মায়ইনি। ফলে বদলে দেওয়ার প্রসঙ্গই আসে না।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনালে ভর্তি হন গড়িয়ার বাসিন্দা প্রসূতি গঙ্গা মান্না। হাসপাতালের তরফে তখনই বলা হয়েছিল, অস্ত্রোপচার ছাড়া সন্তান প্রসব করানো যাবে না। পরিবারের দাবি, এ জন্য ছ’ঘণ্টা সময়ও চেয়ে নেওয়া হয়েছিল। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ডেকে পাঠিয়ে জানান পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন গঙ্গাদেবী। সেই মতো আয়ারা চিকিৎসকের নথিও দেন, যা সদ্যোজাতের জন্ম-শংসাপত্র তৈরিতে কাজে লাগবে। এমনকী ছেলে জন্মেছে বলে ওই আয়ারা পরিবারের কাছ থেকে মিষ্টিমুখ করার জন্য দুশো টাকাও আদায়ও করেন।
গঙ্গাদেবীর পরিবারের বক্তব্য, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত সদ্যোজাতকে দেখানো হয়নি তাঁদের। ‘ভিজিটিং আওয়ার’ পেরিয়ে যাওয়ায় পরিজনেরা বাড়ি ফিরে যান। গঙ্গাদেবীর কাছে থেকে যান তাঁর মা। পরিবারের দাবি, এর পরে এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে রাত আটটা নাগাদ ওই প্রসূতির কাছে আসেন চিকিৎসক ও নার্সেরা। গঙ্গাদেবীর কোলে তাকেই তুলে দিয়ে বলা হয়, ‘‘আপনার কন্যা সন্তানকে নিন।’’
চমকে ওঠেন সদ্য মা হওয়া গঙ্গাদেবী। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে তিনি বলেন, ‘‘আমার তো ছেলে হয়েছে।’’ অভিযোগ, হাসপাতাল তা মানতে চায়নি। তারা জানায়, দুপুরে নথি টাইপ করতে গিয়ে মেয়ের জায়গায় ছেলে লেখা হয়েছিল। একটি ভুল হয়ে গিয়েছে। বাস্তবে গঙ্গাদেবীর মেয়েই হয়েছে।
আচমকা এই খবর পেয়ে গঙ্গাদেবী বাড়িতে ফোন করে বিষয়টি জানালে আধ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে হাজির হন পরিজনেরা। তাঁদেরও একই কথা বলে হাসপাতাল। পরিবারের দাবি, তাঁরা হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তাঁকে পাওয়া যায়নি।
এর পরেই মঙ্গলবার রাতে বেনিয়াপুকুর থানায় মৌখিক অভিযোগ এবং পরে বুধবার হাসপাতালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে গঙ্গাদেবীর পরিবার। তাঁরা জানিয়েছেন, বিষয়টিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী ছিল, তা জানাতে হবে এবং কন্যা সন্তান যদি গঙ্গাদেবীরই হয়ে থাকে, তবে ডিএনএ পরীক্ষা করিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রয়োজনে সেই পরীক্ষা হবে।