সুপ্রিম কোর্টের রায় জাল করে কলকাতা হাইকোর্টে পেশ করার অভিযোগে এক আইনজীবীকে গ্রেফতার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। গোয়েন্দারা জানান, শুক্রবার সুকল্যাণ সরকার নামে ওই আইনজীবীকে গ্রেফতারের পরে শনিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়। সেই আদালতের চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট সত্যার্ণব ঘোষাল অভিযুক্তকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
গোয়েন্দারা জানান, ভবানীপুরের দেবেন্দ্র ঘোষ রোডের একটি শরিকি সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে মনোজকুমার দাস ও তাঁর খুড়তুতো ভাই রামকৃষ্ণ দাস ২০০৪ সালে আলিপুর দেওয়ানি আদালতে মামলা করেন। ওই আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট না হয়ে রামকৃষ্ণ কয়েক বছর আগে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই সময়ে হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম রায় অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেন, আলিপুর আদালতের রায় আগে কার্যকর করতে হবে। হাইকোর্টের রায়ে সন্তুষ্ট না হয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রামকৃষ্ণ।গোয়েন্দারা জানান, মাস কয়েক আগে রামকৃষ্ণ ফের হাইকোর্টে মামলা করে জানান, আলিপুর আদালতের রায়ের উপর সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ হাইকোর্টে পেশ করেন রামকৃষ্ণ। হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম রায়ের আদালতে ফের মামলাটি ওঠে। একই সঙ্গে আলিপুর আদালতেও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কপি পেশ করা হয়।
ব্যাঙ্কশাল আদালতের সরকারি কৌঁসুলি পীযূষকান্তি মণ্ডল জানান, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কপি দেখে বিচারপতি রায়ের সন্দেহ হয়। তিনি রামকৃষ্ণের ভাই মনোজকে নির্দেশ দেন, সুপ্রিম রায় আসল না নকল তা খতিয়ে দেখার জন্য লালবাজারের গোয়েন্দা দফতরে যেতে। প্রয়োজন হলে লিখিত অভিযোগ জানাতে।
পীযূষবাবু জানান, সেপ্টেম্বরে মনোজের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেন লালবাজারের জালিয়াতি দমন শাখার গোয়েন্দারা। জানা যায়, কলকাতা হাইকোর্টে ও আলিপুর আদালতে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির নামে পৃথক দু’টি রায় পেশ করা হয়েছে। রায় দু’টি স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত হলেও তা জাল।
গোয়েন্দারা জানান, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নির্দেশ জাল করার অভিযোগে ২৫ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় রামকৃষ্ণকে। শুক্রবার গ্রেফতার করা হয় রামকৃষ্ণের আইনজীবী সুকল্যাণকে। দু’জন অভিযুক্তকে একসঙ্গে হাজির করানো হয় আদালতে।
এ দিন সুকল্যাণের আইনজীবী আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল রামকৃষ্ণের আইনজীবী হিসেবে আলিপুর আদালতে দাঁড়ালেও সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়াননি। সুপ্রিম কোর্টে রামকৃষ্ণের হয়ে সওয়াল করেন অন্য আইনজীবী। তাই তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নির্দেশ জাল করার অভিযোগ দায়ের করা যায় না। সরকারি কৌঁসুলি পীযূষবাবু পাল্টা জানান, অভিযোগের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তাই রামকৃষ্ণ ও সুকল্যাণকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করা দরকার। রামকৃষ্ণের ৮ নভেম্বর ও সুকল্যাণকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত হয়েছে।