রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকায় এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। প্রতীকী ছবি।
বাবা ও ভাইকে পাঠানো কয়েক মিনিটের ভিডিয়োতে ৩০ বছরের যুবক দাবি করেছিলেন, তাঁর কিছু ভাল লাগছে না। কেউ যেন তাঁকে ভুল না বোঝেন। তিনি আর বাঁচতে চান না। ভিডিয়ো দেখে হকচকিয়ে গেলেও কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি কেউ। এর কিছু পরেই মামার বাড়িতে ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে খবর যায় বাড়িতে।
মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে রিজেন্ট পার্ক থানার ম্যুর অ্যাভিনিউয়ে। পুলিশ জানায়, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী ওই যুবকের নাম ভানুপ্রকাশ ছেত্রী (৩০)। তিনি শিলিগুড়ির বাসিন্দা। চাকরি সূত্রে বছর তিনেক ধরে কলকাতাতে থাকছিলেন তিনি। পুলিশ জেনেছে, গত তিন মাস ভানুপ্রকাশ তাঁর মামা শ্যামলাল শ্রেষ্ঠের ম্যুর অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই ছিলেন। সেখান থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি বলে জানান তদন্তকারীরা। ওই যুবকের মোবাইল ফোন পুলিশ নিয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিজনেরা। তবে তাঁরা কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি।
বুধবার শ্যামলালবাবু জানান, ভানুপ্রকাশের বাবা চূড়ামণি ছেত্রী শিলংয়ে থাকতেন। সেখানেই বড় হয়েছেন ওই যুবক। তবে বর্তমানে তাঁর বাবা-মা শিলিগুড়িতে থাকেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কলকাতার চাকরি পেয়ে সল্টলেকে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন ভানুপ্রকাশ। শ্যামলালবাবু বলেন, ‘‘ভাগ্নেকে বলেছিলাম, মামার বাড়ি থাকতে কেন ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকবি? পরে আমার বাড়িতেই চলে আসে।’’ তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুরে অফিস থেকে ফিরে আসেন ওই যুবক। মামি কমলাদেবী খেতে বললেও ভানুপ্রকাশ রাজি হননি। মোবাইল ফোন নিয়ে ভানুপ্রকাশ মনমরা হয়ে বসেছিলেন।
শ্যামলালবাবু জানান, এর পরে সন্ধ্যায় ভানুপ্রকাশের ঘরের দরজা বন্ধ দেখে সকলে ডাকাডাকি শুরু করে। কিন্তু তিনি দরজা খোলেননি। ফোনও তোলেননি। এর পরে কমলাদেবী জানলা দিয়ে সিলিং থেকে ভানুপ্রকাশকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন। দরজা ভেঙে দড়ি কেটে তাঁকে নীচে নামানো হয়। রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশ এসে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করেন।
শ্যামলালবাবু জানান, গত শুক্রবার শিলিগুড়ি যাচ্ছেন বলে সিকিম চলে গিয়েছিলেন ভানুপ্রকাশ। সোমবার তিনি কলকাতায় ফেরেন। ভাগ্নের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য নির্দিষ্ট কাউকে দায়ী না করলেও প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক নিয়ে ওই যুবক মানসিক অশান্তিতে ছিলেন বলে জানান তাঁর পরিজনেরা। শ্যামলালবাবু বলেন, ‘‘কলেজ জীবন থেকে এক তরুণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল ওর। তিনিও কলকাতায় চাকরি করতে এসেছেন। কিন্তু কিছু দিন আগে সিকিমের আর এক তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় ভাগ্নের। এর পরে প্রথম তরণী সিকিমের বন্ধুকে যোগাযোগ করে তাঁদের সম্পর্কের কথা জানিয়ে দেন। তা নিয়েই অশান্তি চলছিল ওদের মধ্যে।’’ এই ঘটনায় পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে।