অরিজিৎ এবং সম্পূর্ণা দত্ত।
এক দম্পতির মৃত্যু ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার চারু মার্কেট থানা এলাকার লেক গার্ডেন্সের ফ্ল্যাট থেকে তাঁদের দেহ উদ্ধার হয়। মৃতেরা হলেন অরিজিৎ দত্ত (৩২) এবং সম্পূর্ণা দত্ত (৩০)। আদতে চেতলা রোডের বাসিন্দা হলেও তাঁরা ভাড়া থাকতেন লেক গার্ডেন্সে কেএমডিএ-র একটি আবাসনে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, ওই দম্পতি আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে ময়না-তদন্তের পরেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় অ্যাপ-ক্যাবের চালক ছিলেন অরিজিৎ। এ দিন দুপুর একটা নাগাদ চারু মার্কেট থানায় খবর আসে, ওই দম্পতি দরজা খুলছেন না। কিন্তু তাঁদের ফ্ল্যাটের একটি জানলা খোলা রয়েছে। সেখান দিয়ে এক জনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। খবর পেয়েই পৌঁছয় পুলিশ। দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটে ঢুকে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় সম্পূর্ণার দেহ উদ্ধার হয়। অন্য দিকে, অরিজিতের দেহ পড়ে ছিল ঘরের মেঝেতে। তদন্তকারীরা জানান, ঘরের বিছানায় একটি খোলা ডায়েরি পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের দাবি, ওই দম্পতি সেটিতে লিখে গিয়েছেন, ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’। ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বছর তিন-চারেক আগে পাড়ারই মেয়ে সম্পূর্ণাকে বিয়ে করেন অরিজিৎ। ১০ মাস আগে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়। কিন্তু জন্মের কয়েক দিন পর থেকেই শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মাত্র চার মাস বয়সে সে মারা যায়। তার পর থেকেই অবসাদে ভুগছিলেন ওই দম্পতি। এর উপরে গত মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে অরিজিতের কাজও ছিল না। অথচ গাড়ি কেনার জন্য নেওয়া ঋণের কিস্তি মেটাতে হত তাঁকে। দিতে হত ফ্ল্যাটের ভাড়াও। কিন্তু রোজগার না-থাকায় গত কয়েক মাসে সে সব দিতে পারেননি তিনি। সব মিলিয়ে ওই দম্পতি আর্থিক অনটনে পড়েছিলেন। তদন্তকারীদের ধারণা, মূলত সে কারণেই তাঁরা এই চরম পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
এ দিন মেয়ে-জামাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁদের বাড়িতে আসেন সম্পূর্ণার বাবা কৃষ্ণ সরকার। কেন তাঁদের এমন পরিণতি হল, সে সম্পর্কে তিনিও অন্ধকারে। পরে অবশ্য পড়শিদের কাছ থেকে পুলিশ ওই দম্পতির অবসাদের কারণ জানতে পারে।