Air-Conditioned Bus

সরকারি রুটে বেসরকারি বাতানুকূল বাসকে ‘ছাড়পত্র’, বিতর্ক

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, উল্টোডাঙার ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে ওই সব বেসরকারি মিনিবাস হাডকো, পিএনবি, সিএ আইল্যান্ড, বিদ্যাসাগর, সিটি সেন্টার-সহ সল্টলেকের বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে পাঁচ নম্বর সেক্টর হয়ে নিউ টাউনের সাপুরজি আবাসন পর্যন্ত যাতায়াত করবে।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাসমালিক সংগঠনগুলির চাপ সত্ত্বেও ভাড়া বাড়ানোর পথে হাঁটে না পরিবহণ দফতর বা রাজ্য সরকার। যার জেরে রাস্তায় বাস নামাতে চান না মালিকেরা। এ বার সেই পরিবহণ দফতরই সরকারি রুটে বেসরকারি মালিকানার বাতানুকূল মিনিবাস চলার অনুমতি দিচ্ছে। যে বাসের ন্যূনতম ভাড়া হবে ২০ টাকা। সেই বাস দাঁড়াবে সরকারি বাসস্ট্যান্ডেই। কলকাতার রাস্তায় এমন ব্যবস্থা এই প্রথম। কিন্তু পরিবহণ দফতরের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল তৈরি হয়েছে দফতরের আধিকারিকদের একাংশের মধ্যেই। আধিকারিকদের ওই অংশ মনে করেন, এতে পরিবহণ নিগমেরই আর্থিক ক্ষতি হবে।

Advertisement

পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, উল্টোডাঙার ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে ওই সব বেসরকারি মিনিবাস হাডকো, পিএনবি, সিএ আইল্যান্ড, বিদ্যাসাগর, সিটি সেন্টার-সহ সল্টলেকের বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে পাঁচ নম্বর সেক্টর হয়ে নিউ টাউনের সাপুরজি আবাসন পর্যন্ত যাতায়াত করবে। বাসে উঠলেই যাত্রীদের দিতে হবে ২০ টাকা। পাঁচ কিলোমিটার ওই ভাড়ায় যাওয়া যাবে। তার পরে ১০ কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা এবং ১৫ কিলোমিটার দূরত্বের ক্ষেত্রে ভাড়া ৩৫ টাকা।

উল্লেখ্য, এত দিন একক ভাবে রাজ্য পরিবহণ নিগম বাতানুকুল বাস চালাত। পরিবহণ দফতর সূত্রের দাবি, বেসরকারি ওই মিনিবাসের ভাড়াও সরকারি বাতানুকূল বাসের হিসেবেই রাখা হচ্ছে। এই বেসরকারি মিনিবাস নামাতে আগ্রহীদের বিষয়টি জানাতে ইতিমধ্যে পরিবহণ দফতরের তরফে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, স্থানীয়দের আবেদনে গুরুত্ব দিয়ে ওই রুট নির্বাচন করা হয়েছে। এবং আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর ছাড়াও কলকাতা এবং বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ ওই রুটের প্রাসঙ্গিকতা খতিয়ে দেখেছে। আপাতত, ২০টি মিনিবাসকে ওই রুটে চলার জন্য অনুমতি দেওয়া হবে বলে খবর।

Advertisement

বেসরকারি উদ্যোগে বাতানুকূল বাস চালু হওয়ার খবরে খুশি বাসমালিক সংগঠনগুলি জানাচ্ছে, সাধারণ বেসরকারি বাস-মিনিবাসের ন্যূনতম ভাড়া এখনও মাত্র ৭-৮ টাকায় আটকে রয়েছে। তাদের মতে, করোনার আবহে যাত্রী কমেছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচের পরে সাধারণ বাস-মিনিবাস চালানো ক্রমেই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক একটি ধর্মঘটের দিনে রাস্তায় কার্যত দেখা মেলেনি বেসরকারি বাসের। রাস্তায় নেমে চরম হেনস্থায় পড়েছিলেন যাত্রীরা।

ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘এক বার এ ভাবে বেসরকারি এসি বাসের জন্য দরজা খুলে দিলে গণপরিবহণ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে।’’

সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহার দাবি ‘‘উন্নত এবং স্বাচ্ছন্দ্য আছে এমন পরিবহণের জন্য যাত্রীরা টাকা খরচ করতে রাজি আছেন।’’ আবার বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসুর কথায় ‘‘সাধারণ বাতানুকূল বাসের পাশাপাশি সরকার ব্যাটারি চালিত বাসও বেসরকারি উদ্যোগে চালানোর ব্যবস্থা করলে পরিবহণ শিল্পের উপকার হবে।’’

সরকারি আধিকারিকদের একাংশের দাবি, করোনার আগে রাজ্য পরিবহণ নিগমের আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ আসত বাতানুকূল বাস পরিষেবা থেকেই। তাই উল্টোডাঙা-নিউ টাউনের সংশ্লিষ্ট ওই রুটে সরকারি বাস থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি সংস্থার বাতানুকূল বাস চলতে দিলে রাজ্য পরিবহণ নিগমের ক্ষতি হবে। লাভজনক রুট এ ভাবে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার মধ্যে ঘুরপথে বেসরকারিকরণের গন্ধ পাচ্ছেন ওই আধিকারিকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement