প্রতীকী ছবি।
নয়া জরিমানা-বিধি নিয়ে রাজ্য সরকার এবং বাসমালিকদের টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে দিশাহারা অবস্থা যাত্রীদের। জরিমানার কোপে পড়ার আশঙ্কায় রাস্তা থেকে ৩০-৩৫ শতাংশ বাস উধাও হয়ে গিয়েছে। হাপিত্যেশ করেও বহু রুটে বাসের দেখা মিলছে না। বাস পেলেও অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। অর্থাৎ, অতিরিক্ত খরচ করেও যাত্রীদের হয়রানি কমার কোনও লক্ষণ নেই।
এ সবের মধ্যেই সরকারি বিধি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছে কম-বেশি সব ক’টি সংগঠন। সেই সমস্যার জট না খোলায় ভুগছেন যাত্রীরা। অতিমারি আবহে পথে নেমেও আয় না হওয়ার অভিযোগে প্রথম থেকেই সরব ছিলেন বেসরকারি বাসের মালিকেরা। তাঁদের দাবি, পথকর, বিমা, পারমিট-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বকেয়া মেটাতে না পারায় স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যেতে পারছে না বাস। নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার শংসাপত্র হাতে না পেলে দেরির জন্য দৈনিক ৫০ টাকা করে জরিমানার বোঝা ঘাড়ে চাপছে।
সরকার বাস ভাড়া বাড়ায়নি। তবুও বেসরকারি বাসে উঠলেই দেড় গুণ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। শহরের মধ্যে অল্প দূরত্ব যেতে বাসে ওই হার ন্যূনতম ৪ থেকে ৫ টাকা। যাত্রীদের প্রশ্ন, অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েও আয় না থাকার যুক্তি ধোপে টেকে কী ভাবে? পথে বেরিয়ে বাস না-মেলার খেসারত তাঁদেরই বা কেন দিতে হবে? অন্য দিকে বাসমালিক সংগঠনগুলির দাবি, যাত্রী যে হারে কমেছে, তাতে বর্ধিত ভাড়া নিয়েও কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না।
এরই মধ্যে গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো চালু হয়েছে জরিমানা সংক্রান্ত নয়া নির্দেশিকা, এমনই অভিযোগ বাসমালিকদের। পথ নিরাপত্তার নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে না পারলেই চড়া হারে জরিমানা দেওয়ার ফরমান রয়েছে নির্দেশিকায়। সে সবেরই প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে বাস, মিনিবাস এবং অ্যাপ-ক্যাব চালকদের যৌথ মঞ্চ ‘জয়েন্ট ফোরাম অব ট্রান্সপোর্ট অপারেটর্স’ পথে নেমেছে। সরাসরি পরিষেবা বন্ধ রাখার দিকে না গেলেও বেসরকারি বাসে কালো পতাকা এবং পোস্টার লাগিয়ে প্রতিবাদ চলছে। বাসচালক এবং কন্ডাক্টরেরাও কালো ব্যাজ পরে কাজ করছেন।
সরকার দুর্ঘটনা কমাতে জরিমানার নির্দেশিকা দিলেও যাত্রীদের সমস্যা নিয়ে কতটা ওয়াকিবহাল, সেই প্রশ্ন উঠছে। বাসমালিক সংগঠনগুলির দাবির নিষ্পত্তি না হলে, যাত্রীদের সব দিকেই ভোগান্তি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অধিকাংশ রুটে বাস না-মেলায় যাত্রীদের অটোয় চড়া ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। জয়েন্ট অপারেটর্স ফোরামের অন্যতম সদস্য, ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘অতিমারির কারণে যাত্রী এতই কমেছে যে, কোনও ভাবেই কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। জরিমানার নয়া বিধি আরও সঙ্কট বাড়িয়েছে। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বা বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে নির্দেশিকায় থাকা জরিমানার বিরোধিতা করছি না। কিন্তু ট্র্যাফিক আইন ভাঙার ক্ষেত্রে নির্দেশিকার আংশিক বদল চাই।’’
সমস্যা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও পরিবহণমন্ত্রী ও সচিবকে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। জরিমানা প্রত্যাহার না-করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথা আগেই জানিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ভাড়া না বাড়িয়ে জ্বালানির খরচ কমাতে সিএনজি-চালিত বাসের কথা ভাবা হচ্ছে বলেও পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর। এ নিয়ে বাসমালিক সংগঠনের সঙ্গে সরকারের কথা চলছে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকেরা।
ফোরামের সদস্যেরা অবশ্য জরিমানার নয়া বিধি নিয়ে প্রতিবাদের মধ্যেই আলোচনার রাস্তা খোলা রাখার কথা জানাচ্ছেন। অভিযোগ উঠছে, দু’পক্ষের টানাপড়েনে যাত্রীর হয়রানির অবসান হবে কী ভাবে, সে দিকে কারও নজর নেই।