প্রতীকী চিত্র।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে এ রাজ্যেও। যে কারণে কলকাতায় প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনায় আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ মিলছে না বলেও অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতেও অবশ্য পরোয়া নেই শহরবাসীর একাংশের। সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে, ভোটের মরসুমে প্রচারে বেরোনো নেতা-নেত্রীদের মুখে মাস্কের বালাই নেই। তাঁদের সভাস্থলে ঠাসাঠাসি ভিড় করে থাকা জনতারও প্রায় সকলেই মাস্কবিহীন।
পথে নেমে ওই ভিড় সামলানোর কাজ করতে গিয়ে পুলিশকর্মীরা যাতে নতুন করে সংক্রমিত না হন, তার জন্য সচেষ্ট হয়েছে লালবাজার। সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য দফতর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনা-বিধি সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রত্যেক পুলিশকর্মীকে মাস্ক এবং ফেস শিল্ড পরে থাকতে বলা হয়েছে। নিজেদের সঙ্গে স্যানিটাইজ়ারও রাখতে বলা হয়েছে, যাতে বার বার তা ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া, প্রতিটি থানায় যাতে সব রকম করোনা-বিধি মানা হয়, সেই নির্দেশও দিয়েছেন লালবাজারের কর্তারা। কোনও থানায় বাইরে থেকে কেউ এলে তাঁকে স্যানিটাইজ় করার পরে তবেই ভিতরে ঢুকতে দিতে বলেছে লালবাজার। তবে গত বছরের মতো থানায় বহিরাগত বিচারপ্রার্থীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে রাশ টানা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে লালবাজার থানাগুলিকে সরাসরি কিছু জানায়নি। এক পুলিশকর্তা জানান, থানা যা মনে করবে, তা-ই করবে করোনা-বিধি মেনে। এর আগে পুলিশকর্মীদের কারও কোনও উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ছুটিতে পাঠিয়ে করোনা পরীক্ষা করানোর নির্দেশ জারি হয়েছিল।
মঙ্গলবার পর্যন্ত গত এক বছরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বাহিনীর ৪১৫০-এরও বেশি জন সদস্য। এর মধ্যে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনার কারণে। দ্বিতীয় দফায় এখনও পর্যন্ত ২৮ জন পুলিশকর্মী করোনার কবলে পড়েছেন।
পুলিশ জানায়, যে সমস্ত নাগরিক গত বছরের ভয়াবহতাকে ভুলে গিয়ে কোনও রকম করোনা-বিধি মানছেন না, রাস্তায় নেমে তাঁদের পুনরায় সতর্ক করার কাজ শুরু করতে চায় লালবাজার। তেমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে থানাগুলিকে। তবে যাঁরা করোনা-বিধি মানছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে এখনই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেয়নি লালবাজার। বর্তমানে বিভিন্ন থানা প্রতিদিন নিয়ম করে মাস্কবিহীন লোকজনের বিরুদ্ধে কেস দিচ্ছে। একই সঙ্গে যত্রতত্র থুতু ফেললেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এই দুই ধরনের নজরদারি যাতে আরও গতি পায়, তার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে থানাগুলিকে।
তবে তাতে কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে পুলিশকর্মীদের একাংশের মনেই সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে, কাল, বৃহস্পতিবার পয়লা বৈশাখ। নববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় ভিড় হবে। সেই ভিড় কী ভাবে ঠেকানো যাবে বা দূরত্ব-বিধি কী ভাবে পালন করা যাবে, তা নিয়ে কোনও দিশা দেখাতে পারেনি লালবাজারও। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘রাস্তাঘাটে বা বাজারে ভিড়ের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। তবু মানুষের উৎসাহে লাগাম টানা যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি, সবাইকে সতর্ক করতে। থানাগুলিকেও সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ লালবাজার জানিয়েছে, পার্ক, বাজার, বাসস্ট্যান্ডের মতো জনবহুল এলাকায় আজ, বুধবার থেকে মাইকে সচেতনতার প্রচার চালানো হবে।